ছবিতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব
জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩১ আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৭
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে মহাবিপৎসংকেত তুলে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বুলবুলের রেশ আছে। এই রেশ আরও দুই দিন থাকবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগামী দুই দিন বৃষ্টি হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এদিকে বুলবুলের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এতে এখন পর্যন্ত আটজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পাঁচ জেলায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাঁচ জেলায় নিহত আট জনের মধ্যে পরিচয় মিলেছে চার জনের।
ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পড়ে খুলনায় দুজন, বাগেরহাটে একজন এবং পটুয়াখালীতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বরগুনায় আশ্রয়কেন্দ্রে এবং সাতক্ষীরায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ হাজারের বেশি বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি সূত্র। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রোববার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বুলবুলের কারণে পাঁচ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা শুনতে পারলাম গড়ে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৪০ থেকে ৯০ কিলোমিটার, এটা খুবই কম। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবার সেই রকম কিছু হয়নি।
এনামুর রহমান বলেন, ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আমরা সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলাম।
৫ হাজার ৫৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জনকে আমরা সফলভাবে সরিয়ে নিতে পেরেছি। নিরাপত্তা দিতে পেরেছি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এই পর্যন্ত হতাহতের খবর খুব বেশি পাওয়া যায়নি। আমরা অফিসিয়ালি ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছি। সংবাদ মাধ্যমে আটজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।
আর ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে। চার থেকে ৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এটাই ছিল আমাদের ক্ষয়ক্ষতির খবর।
শুরুর দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল ছিল একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। শুরুর দিকে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। কখনো কখনো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। সেই জায়গা থেকে এখন বাতাসের গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বুলবুল এখন আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে নেই। এমনকি এটি এখন আর ঘূর্ণিঝড়ও নয়। এটি একটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশে আসার আগে গতকাল শনিবার মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। একই মহাবিপৎসংকেতের আওতায় ছিল উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো। তবে এসব মহাবিপদসংকেত তুলে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে ছিল মহাবিপৎসংকেত ১০। এটি ছিল পায়রা ও মোংলায়। এখন ওই দুই জায়গায় মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে হবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ছিল মহা বিপদ সংকেত ৯। সেখানে মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে হবে। কক্সবাজারের ছিল ৪। সেখানে হবে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত। নদীবন্দরে ছোট ছোট লঞ্চের জন্য ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত বিদ্যমান আছে।
বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে সৃষ্টি হয়ে বুলবুল ধেয়ে আসে উত্তর-পূর্ব দিকে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বুলবুল বয়ে যায় সুন্দরবনের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অংশের ধানচি সংলগ্ন এলাকা দিয়ে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগেই বুলবুলের কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় অংশ লন্ডভন্ড হয় বুলবুলের তাণ্ডবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, প্রথমে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এই আঘাতের পর সেটি দুর্বল হয়ে যায়। সে জন্য বাংলাদেশে আসতে আসতে বুলবুলের বাতাসের গতিবেগ আরও কমে যায়।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে বুলবুলের প্রভাবে আগামী দুই দিন থেমে থেমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে আরও তিন চার দিন লাগবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে