সুন্দরবন টিকিয়ে রাখা কতটা জরুরি?
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলেও এর তীব্রতা আশঙ্কার চেয়ে কম ছিল। দক্ষিণে সুন্দরবন দিয়ে প্রবেশ করায় তা আরো দুর্বল হয়ে যায়। প্রবল শক্তির এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সেভাবে পড়তে পারেনি বনের গাছপালায় এই ঝড় বাধা পাবার কারণে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, সুন্দরবন বারবারই বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড় থেকে ঢাল হয়ে রক্ষা করছে। আর উপকূলীয় এলকার সবুজ বেষ্টনীও এই সময় কাজ করে।
তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ৯০ থেকে দমকা হাওয়ায় ১২০ কিলোমিটার। তখন এটা ছিলো প্রবল ঘুর্ণিঝড়। কিন্তু স্থলভাগে সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে এটা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। বাতাসের গতিবেগ কমে গিয়ে ৬০ থেকে দমকায় ৮০ কিলোমিটার হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে দুই ধরণের ধাক্কা যায়। প্রথমে ক্ষিপ্র গতির বাতাস এরপর জলোচ্ছ্বাস। সুন্দরবনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতি নিয়ে খুলনা আর বাগেরহাটে লোকালয়ে পৌঁছায়।
অন্যদিকে, জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়।
এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তেমন থাকে না বলে বলছেন পরিবেশবিদরা।
এদিকে খুলনা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ. বশিরুল আল মামুন ধারণা করছেন এবারের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্য প্রাণীদের ওপর বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।
কেননা সুন্দরবনে যে সময়টায় জোয়ার হয়, সে সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত করেনি। যার কারণে এবার পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে খুব একটা বেশি ছিল না।
তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এবারে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল বেগে সুন্দরবনে আছড়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বন কর্মকর্তারা।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মামুন। এবারের ক্ষয়ক্ষতি সিডরের মতো না হওয়ায় বন খুব দ্রুত নিজ সক্ষমতায় পূর্বের অবস্থায় ফেরত যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ছোবল থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সুন্দরবন যে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পরিবেশবিদ ড. একিউএম মাহবুব বলেন, মনে করেন আপনার বাড়ির সামনে একটা দেয়াল আছে। সেটার কারণে বন্যার পানি, দমকা বাতাস আপনার ঘরে ঢুকতে পারবে না। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের জন্য সুন্দরবন ঠিক সেই দেয়ালের কাজটাই করে।
এই বন না থাকলে উপকূলে বড় ধরণের তাণ্ডব হতে পারতো বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। রক্ষা করেছে উপকূলকে। সেই দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়েছিল বিস্তৃত বনাঞ্চল।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সুন্দরবন সহায়তা করেছে। সুন্দরবনকে রক্ষায় শিগগিরই ২২টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রণয়নের কথা জানান তিনি।
বনে যত্রতত্র গাছ কাটা ঠেকাতে ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বনের নিরাপত্তা বাড়ানো, সেইসঙ্গে বনায়নের জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর সুপারিশ করবেন তারা। সবুজ উপকূল বেষ্টনী করার বিষয়টিকেও তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
এনামুর রহমান বলেন, সুন্দরবন শুধু এবার না এর আগেও অসংখ্য ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। আমাদেরও মনে হয়েছে এই দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে রক্ষায় আমাদের সুন্দরবনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই
