ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দিনাজপুরে সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫১

দিনাজপুরে সেতু রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

দিনাজপুর সদরের মাঝাডাঙ্গায় অবস্থিত ঢেপা নদীর উপর মাঝাডাঙ্গা সেতুর আশপাশ হতে বোমা শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং ক্ষতিগ্রস্থ সেতু মেরামত ও সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে মাঝাডাঙ্গাবাসী।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে মাঝাডাঙ্গা গ্রামবাসী।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ঢেপার নদীর উপর বিশাল বড় মাঝাডাঙ্গা সেতুর নীচ থেকে বোমা মেশিন লাগিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে সেতুটি আজ হুমকির মুখে। যে কোন সময় এই বিশাল সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে যেতে পারে। সেতুর পিলারে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় অবৈধ বালুখোরদের হাত থেকে সেতুটি রক্ষা ও মেরামত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

মাবনবন্ধনে বক্তরা বলেন, জনগনের ট্যক্সের টাকায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতু দিয়ে দিনাজপুর সদর , বিরল, কাহারোল, বোচাগঞ্জ উপজেলার লোকজন, পাশ্ববর্তী জেলার হাজার হাজার যানবাহন ও সাধারন জন সাধারন ও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করে। দিনাজপুর জেলা সদরের সাথে পাশ্ববর্তী সকল উপজেলার বাসীর আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম হল এই মাঝাডাঙ্গা সেতু। কিন্তু অবৈধভাবে এই সেতু সংলগ্ন অংশে বোমা শ্যালো মেশিন লাগিয়ে দিন রাত বালু উত্তোলন করায় সেতুটি আজ চরম হুমকির মুখে। সেতুর পিলারে ও নদীতে ২৫/৩০ ফুট গর্ত হয়েছে। সেই গর্তের ফলে ঢেপা নদীর আশপাশের গ্রামগুলিতে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর গর্তে পড়ে এই মাঝাডাঙ্গা গ্রামের ২ বছরে ৯ শিশু/ কিশোরের অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, সেতু মেরামত ও সংস্কার না হলে সেতুটি ভেঙ্গে পড়বে ।

মানববন্ধনে বক্তরা আরোও বলেন, বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শহরের বাঙ্গিবেচা ব্রিজ ও আশেপাশের গ্রামগুলি। বালু উত্তোলনের কারণে ব্রিজের পিলারের কাছে সৃষ্টি হয়েছে ১০ ফুট আকারের গর্ত। ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে ব্রিজের মাটির নিচের পিলার। বেরিয়ে এসেছে লোহার রড।

বিগত ২ বছরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সৃষ্ট গর্তে পড়ে মৃত্যু হয়েছে নয় শিশু, কিশোর ও বয়স্ক ব্যক্তির। এছাড়া প্রভাবশালী বালুখেকোদের কারণে নদীতে মাছ শিকারেও যেতে পারছেন না জেলেরা।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বোমা মেশিন বা অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অথচ দিনাজপুরের ঢেপা (কাঞ্চন) নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ব্রিজের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। দিনাজপুর শহরের মাঝাডাঙ্গা এলাকাস্থ বাঙ্গিবেচা ব্রিজের কাছ দিয়ে দুইটি বড় বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজটি।

সরেজমিনে বাঙ্গিবেচা ব্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজে রয়েছে মোট ছয়টি পিলার। যার মধ্যে চারটি পিলারই ঝুঁকিতে। সাধারণত ব্রিজ নির্মাণ করা হয় তিন ধাপে। যার মধ্যে প্রথমধাপে মাটির নিচ থেকে পিলার ঢালাই দিয়ে লেভেলে আনা হয়। এরপর ঢালাই দেওয়া হয় বেইজমেন্টের। শেষ ধাপে ওঠে ব্রিজের মূল পিলার। যেখানে মাটির নিচের পিলারগুলো সাধারণত দৃশ্যমান হওয়ার কথা না। কিন্তু বাঙ্গিবেচা ব্রিজের দৃশ্য উল্টো ধরনের। ঝুঁকিতে ব্রিজের পিলার। বালুখেকোদের কবলে পড়ে যেই পিলার মাটির নিচে থাকার কথা, সেই পিলার প্রায় ১০ ফুটের মতো দেখা যাচ্ছে মাটির উপরে। ব্রিজের পিলারের নিচে বালু সরে যাওয়ায় মাটির নিচের পিলারে দেখা দিয়েছে ফাটল। এছাড়া অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভেতরে থাকা লোহার রড। অন্যান্য ব্রিজের ওপর দিয়ে কোনো বড় ধরনের গাড়ি গেলে ব্রিজটি ঝাঁকুনি খায়। কিন্তু বাঙ্গিবেচা ব্রিজের ওপর দিয়ে সামান্য একটি ইজিবাইক গেলেও ব্রিজটিতে তীব্র ঝাঁকুনি সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি বালুখেকোদের হাত থেকে বাঙ্গিবেচা ব্রিজকে রক্ষা করতে একত্রিত হয়েছেন ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করা ১৩টি গ্রামের হাজারো মানুষ। গঠন করা হয়েছে ব্রিজ রক্ষা কমিটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুইহারি-মাঝাডাঙ্গা ব্রিজ রক্ষা কমিটি’। এই কমিটিতে রয়েছে ১৩টি মহল্লা।

এছাড়াও ব্রিজের বিপরীত পাশে গড়ে উঠেছে সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বসতি। যেটি দেশের সর্ববৃহৎ ‘মানবপল্লী’ হিসেবে পরিচিত। নদীর পাশে মানবপল্লীটির অবস্থান হওয়ায় তারাও রয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়।

এলাকার মৎস্যজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা নদীতে ঠিকমতো মাছ শিকার করতে পারি না। তারা আমাদেরকে নদীতে নামতে দেয় না। আমরা মাছ শিকার করতে গেলে তারা আমাদের গায়ে হাত দেয়। আমরা ভয়ে মাছ শিকার করতে পারছি না।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান বলেন, বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন সম্পন্ন নিষিদ্ধ। বিভিন্নভাবে অভিযোগ পাওয়ার পরে সরেজমিন তদন্ত করে এ ব্যাপারে ইতোপূর্বে আমরা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের একটি টিম খুব শিগগিরই বাঙ্গিবেচা ব্রিজের সার্বিক পরিদর্শন করেছি। সেতুটির ভিপ থেকে বালু সরে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেতুটি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত