ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকদের তালিকায় জিয়াউর রহমান

ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকদের তালিকায় জিয়াউর রহমান

পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে দীর্ঘদিন যাবত দেশ পরিচালনা করেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামও রয়েছে। জার্মানির বিখ্যাত গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এমন ১৫ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে।

হিটলার: নিষ্ঠুরতার তালিকায় নিঃসন্দেহে সবার আগে থাকবে জার্মানির অ্যাডলফ হিটলারের নাম। হিটলারের অপরাধের তালিকাও বেশ বড়। এক কোটিরও বেশি মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিুরুদ্ধে। এর মধ্যে ৬০ লাখই ছিলেন ইহুদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার কারণেই শুরু হয়, সে যুদ্ধে প্রাণ হারান সাত কোটি মানুষ।

মাও সে তুং: মাও-কে বলা যেতে পারে আধুনিক চীনের রূপকার। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ। ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুসরণে অর্থনৈতিক মডেল দিয়ে উন্নয়নের কথা বলেন। হত্যা করা হয় সাড়ে চার কোটি মানুষকে। ১০ বছর পর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে আরো প্রায় তিন কোটি মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে মাও-এর বিরুদ্ধে।

জোসেফ স্টালিন: সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাডিমির লেনিনের মতে স্টালিন ছিলেন অনেক কঠোর স্বভাবের মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার নেতৃত্বে হিটলারের জার্মানিকে হারাতে ভূমিকা রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু স্টালিন নিজেও ছিলেন স্বৈরাচারী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরই নয় শুধু, তার ৩১ বছরের শাসনামলে হত্যা করা হয় অন্তত ২০ লাখ মানুষকে।

বেনিতো মুসোলিনি: ফ্যাসিজমের প্রণেতা হিসেবে মনে করা হয় ইটালির এই স্বৈরশাসককে। ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্ট শক্তি কিংডম অব ইটালির ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি। তার থেকেই জার্মান ফ্যাসিস্ট শাসক হিটলার অনুপ্রেরণা পান বলে ধারণা করা হয়। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন মুসোলিনি। ১৯৪৫ সালে স্পেনে পালানোর সময় তাকে হত্যা করা হয়।

ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্ক: স্পেনের গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়ে ১৯৩৯ সালে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো। গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অন্তত দেড় লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুদ্ধের পরও কমপক্ষে ২০ হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অক্ষশক্তির অন্যসব শাসকের পতন ঘটলেও ফ্রাঙ্কো ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

পল পট: কম্বোডিয়ার খেমার রুজ আন্দোলনের নেতা ছিলেন পল পট। ক্ষমতায় আরোহণের পরবর্তী ১০ বছরে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় তাকে। বেশিরভাগের মৃত্যু হয় শ্রম ক্যাম্পে অনাহারে অথবা কারাগারে নির্যাতনের ফলে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার বনে পল পট গেরিলাদের উপস্থিতি ছিল।

ইয়াহিয়া খান: ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পান ইয়াহিয়া খান। সে বছরই স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের কাছ থেকে পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা’ নামে পরিচিত এই নৃশংস ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় তাকে।

জিয়াউর রহমান: ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। এরপর নির্বিচারে হত্যা করেন-সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেন। একই সঙ্গে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে এবং মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে দেশ পরিচালনা করেন জিয়াউর রহমান। এছাড়া গুম, খুন ও হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে টিকিয়ে রাখেন জিয়া। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল এই জিয়া।

ফ্রাঁসোয়া দুভেলিয়ে: ১৯৫৭ সালে হাইতির ক্ষমতায় বসেন দুভেলিয়ে। হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন তিনি। কালো জাদু দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখেন, এমন দাবিও করতেন তিনি। হাইতিয়ানদের কাছে ‘পাপা ডক’ নামে খ্যাত ছিলেন এই স্বৈরশাসক। ১৯৭১ সালে মৃত্যুর পর তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে জ্যঁ ক্লদ দুভেলিয়ে স্বৈরশাসক হন।

অগাস্তো পিনোশে: চিলির সামরিক বাহিনীর প্রধান অগাস্তো পিনোশে দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করেন ১৯৭৩ সালে৷ ক্ষমতায় আসার পর দেশ থেকে বামপন্থা নির্মূলের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে হত্যা নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পিনোশের বিরুদ্ধে।

সাদ্দাম হোসেন: কুর্দি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের ঘৃণা কারো অজানা ছিল না। ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তিন লাখ কুর্দিকে ইরাকে হত্যা করা হয়। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও ছিল সাদ্দামের বিরুদ্ধে। মার্কিন বাহিনী ইরাক দখলের পর সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৬ সালে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।

ইদি আমিন: আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ক্ষমতায় সাত বছর ছিলেন ইদি আমিন। তার বিরুদ্ধে আড়াই লাখ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। জাতিগত নিধন, হত্যা ও নির্যাতনের এক অধ্যায় রচনা করেছিলেন ইদি আমিন। ‘উগান্ডার কসাই’ আখ্যাও পেয়েছিলেন তিনি। উৎখাত হওয়ার পর সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করেছেন এই একনায়ক।

মেঙ্গিস্তু হাইলে মারিয়াম: ইথিওপিয়ার এই সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতন চালান। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ এই এক বছরেই পাঁচ লাখ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর গণহত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তবে মারিয়াম পালিয়ে যান জিম্বাবোয়েতে।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি: ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। হাজার হাজার মানুষকে, বিশেষ করে গণতন্ত্রকামীদের নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার শাসনামলে। ২০১১ সালে এক অভ্যুত্থানে তাকে উৎখাত ও হত্যা করা হয়। তারপর থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত