ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে

কর্মবিরতিতে নৌযান শ্রমিকরা

১১ দফা দাবিতে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়। এই ধর্মঘটের ফলে ঢাকাসহ দেশের ৪৩টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমাদের ধর্মঘট শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ১১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছি। লঞ্চ মালিকপক্ষ শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি‌। গত বুধবারও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম, কিন্তু আবারও আশ্বাস। তাই শ্রমিকরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়ায় আমরা ধর্মঘট করছি।

তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করেছিলাম, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। মালিকপক্ষ বলেছিল, আমাদের দাবিদাওয়া পূরণ করে দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো দাবিদাওয়া পূরণ করেনি।

বাংলাদেশ জাহাজ শ্রমিক ফেডারেশনের ১৪ দফা ও নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।

দাবিগুলোর মধ্যে যা আছেঃ-

বাল্কহেডসহ সব নৌ-যানে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ। ২০১৬ সালের ঘোষিত গেজেট মোতাবেক কেরাণী, কেবিনবয় ও ইলেকট্রিশিয়ানসহ সব নৌ-শ্রমিককে বেতন প্রদান।

ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান ও হয়রানি বন্ধ। সব নৌ-শ্রমিককে মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান। এনড্রোস, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ। কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ।

নৌ-শ্রমিককে মালিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দিতে হবে। নৌ-শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নদীর নাব্যতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন। মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিরতণ, সনদ নবায়ন, পরিদর্শনসহ নৌ পরিবহন অধিদফতরের সব প্রকার অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ। চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরে আউটারে চলাচলকারী শ্রমিকদের সি-এলাউন্স দিতে হবে।

গত বুধবার সচিবালয়ে ফেডারেশনেরে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- নৌপরিবহন খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র এবং সার্ভিস বুক দেবেন মালিক। এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না-তা তদারকি করবে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর।

এছাড়া এ খাতের শ্রমিকদের খাদ্যভাতা দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নৌ পরিবহন শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ওয়েলফেয়ার ফান্ড গঠনের বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের তাদের ৩০ নভেম্বর থেকে আহুত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। শ্রমিকরা নেতারা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

পরে বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ওইদিন শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়েও সভা করে ফেডারেশন। সেখানে দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার মাস্টার।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন জেলা শাখার সভাপতি সরদার আলমগীর মাস্টারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চুন্নু মাস্টার, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক কবির হোসেন, ডেমরা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন, দশআনি মোহনপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত