ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নোম্যান্সল্যান্ডে বিএসএফের চৌকি, রাজশাহীতে উত্তেজনা

  রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৫৭  
আপডেট :
 ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:০২

নোম্যান্সল্যান্ডে বিএসএফের চৌকি, রাজশাহীতে উত্তেজনা
প্রতীকী ছবি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে সম্প্রতি এক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী নিহত হয়েছেন। গত অক্টোবরের সেই ঘটনায় দুই দেশের সিমান্তে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডের ওপরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) একটি অস্থায়ী চৌকি স্থাপন নিয়ে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গোদাগাড়ীর সাহেবনগর সীমান্তে শুক্রবার গভীর রাতে বিএসএফ এ চৌকিটি স্থাপন করেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সাহেবনগর সীমান্ত ফাঁড়ির এক কিলোমিটার পূর্ব পাশে পদ্মা নদী থেকে বের হয়ে একটি কাটা নদী উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার চরলবণগোলা এলাকায় ঢুকেছে।

তবে কাটা নদীটির ভাঙনে সেখানকার সীমানা পিলারগুলো গত বছরই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি কাটা নদীটিতে পানি কমে গিয়ে পশ্চিমপ্রান্তে বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে ছোট একটি চর পড়েছে।

নোম্যান্সল্যান্ড সংলগ্ন চরটিতে গিয়ে কিছু দিন ধরে বিজিবি সদস্যরা টহল করতেন। চরটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত বলে নৌকা ছাড়াই পায়ে হেঁটেই বিজিবি সেখানে যাতায়াত করতেন।

এদিকে শুক্রবার রাতে বিএসএফ সদস্যরা ইঞ্জিন নৌকাযোগে চরটিতে গিয়ে রাতারাতি সেখানে বাঁশের মাচা পেতে ওপরে খড় ও পাটকাঠি দিয়ে একটি অস্থায়ী চৌকি তৈরি করেন।

পর দিন শনিবার সকাল থেকে ভারতের চরলবণগোলা ফাঁড়ির বিএসএফ সদস্যরা সেখানে অবস্থান ও টহল করতে শুরু করেন।

বিজিবি সদস্যরা রোববার দিনের বেলায় একবার ও রাতের বেলা আরেকবার চরের কাছাকাছি গিয়ে চলে যাওয়ার সিগন্যাল দিলে বিএসএফ সদস্যরা চৌকি ছেড়ে পালিয়ে যান।

রাতে আবারও নৌকা সহযোগে গিয়ে বিএসএফ সদস্যরা চরে ওঠার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে বিজিবি চরে গিয়ে অবস্থান নেন। ফলে বিএসএফ নৌকা ঘুরিয়ে ভারতের ভেতরে চলে যায়।

তবে গভীর রাতে বিএসএফ আবারও চরের অস্থায়ী চৌকিতে গিয়ে অবস্থান নেয়। সোমবার সকালে বিজিবি সেখানে গেলে বিএসএফ চর ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।

বিজিবি সূত্র বলছে, বিএসএফ সদস্যদের এই লুকোচুরিতে তারা বিরক্ত। এলাকাবাসী লাঠিসোটা নিয়ে গিয়ে চৌকিটি ভেঙে ফেলার জন্য বিজিবিকে চাপ দিচ্ছে। তবে তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো ঘটনা না ঘটাতে বিজিবি গ্রামবাসীকে নিষেধ করেছে।

অন্যদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নতুন এই চরটির সঙ্গে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড সংযুক্ত। চরের আশপাশে রয়েছে বাংলাদেশের ফসলি জমি, যেখানে কৃষকরা নিয়মিত চাষাবাদের কাজ করতেন।

কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে বিএসএফ অস্থায়ী চৌকি তৈরি করার পর থেকে কৃষকরা জমিতে যেতে পারছেন না। কৃষকরা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে চরে অস্থায়ী চৌকি তৈরির জন্য বিজিবির কাছে দাবি করেছেন।

এদিকে জেগে ওঠা চরে বিএসএফের অস্থায়ী চৌকি তৈরি ও অবস্থান করা প্রসঙ্গে রাজশাহীর ১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন ডেলটা কোম্পানির কমান্ডার নায়েব সুবেদার শওকত আলী জানান, বিএসএফ যেখানে অস্থায়ী ছাউনিটা করেছে, সেটি নোম্যান্সল্যান্ডের ওপরে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নোম্যান্সল্যান্ড থেকে নিজ নিজ সীমানার ১৫০ গজ ভেতরে চৌকি করার নিয়ম। হঠাৎ গড়ে ওঠা এই চৌকিটা দেখতে পেয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের চরলবণগোলা কোম্পানিকে চিঠি ও বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

কিন্তু সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিএসএফ কোনো চিঠি গ্রহণ করেনি। বিষয়টি বিজিবির রাজশাহী ব্যাটালিয়ন সদর কমান্ডার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর সাহেবনগর বিজিবি ফাঁড়ি সেভাবেই পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত