ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

দোহার-নবাবগঞ্জের ইটভাটায় লাগামহীন শিশুশ্রম, পরিবেশ দূষণ

  নবাবগঞ্জ-দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৭

দোহার-নবাবগঞ্জের ইটভাটায় লাগামহীন শিশুশ্রম, পরিবেশ দূষণ

ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় সরকারি নীতিমালা অনুসরণ না করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০ এর অধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটার অধিকাংশের নেই সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাত্রপত্র। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব ইটভাটায় চলছে অবাধ শিশুশ্রম। মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি। এমটাই দাবি এলাকাবাসী ও স্থানীয় কৃষকদের।

এই অঞ্চলে অবস্থিত ইটভাটাগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখাযায়, অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা দরিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী অসংখ্য শিশু, কিশোর, কিশোরীকে ইট তৈরি ও বহনের কাজে নিয়োজিত করেছে। এরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। শিশুশ্রম নামক এই অমানবিক কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করছে এ দুই উপজেলার প্রশাসন। ফলে প্রতিনিয়ত শিশু শ্রম আইন লংঘন হচ্ছে এসব ইটভাটায়।

নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা চালনাই এলাকায় অবস্থিত মেসার্স দোহার নবাবগঞ্জ ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এন.ডি.বি) ও দোহার খালপাড় এলাকায় এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ ( এ.বি.আই) নামের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু শ্রমিকরা জানায়, ১শ’ ইট বহন করে গাড়িতে পৌছে দিলে সরদার তাদের ৯৫ টাকা থেকে ১শ’ টাকা দেয়। আর এভাবেই প্রতিদিন তারা ২ থেকে ৩শ’ টাকা আয় করে থাকে।

দোহারের খালপাড় এলাকার এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজে (এ.বি.আই) কর্মরত কালামের বয়স ৯ বছর (আসল নাম নয়)। সে জানায়, আমাদের ইটভাটায় কোনো স্কুল, মসজিদ নেই। লেখাপড়া করবো কিভাবে। লেখাপড়া করতে টাকা লাগে। পাশে বউবাজার এলাকায় মাদরাসা আছে, যাই না।

দোহার ও নবাবগঞ্জের ইটভাটাগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী অসংখ্য শিশু, কিশোর, কিশোরী ইট তৈরি ও বহনের কাজে নিয়োজিত। নেই স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটিমনের ব্যবস্থা ও বাসস্থান। আর ইটভাটার চুল্লি খেকে নির্গত কালো ধোঁয়া কারণে অধিকাংশ শিশু, কিশোর, কিশোরী স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায় ভুগছে।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে ভাটার শ্রমিকরা জানায়, কয়লার চেয়ে কাঠের দাম কম হওয়ায় ভাটার মালিকপক্ষ বিভিন্ন গাছ ও কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, খোস পাচড়া বেশি দেখা যায়।

দেখা যায়, নবাবগঞ্জের কলাকোপা ইউপির সাহেবখালী ও দোহার খালপাড় এলাকায় অবস্থিত শত শত বিঘা কৃষিজমি জুড়ে চলছে ইটভাটার রমরমা ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই আইন কানুনের বালাই। ফসলি জমির বেহাল দশা। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য পুকুর ও ডোবা। এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় প্রশাসন, শ্রম আইন দপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এসব ইটভাটার মালিকরা বছরের পর বছর নিজেদের ইচ্ছে মতো ইট তৈরি করছে।

দোহার খালপাড়ের স্থানীয় কৃষক বাবুল শেখ বলেন, ইটভাটাগুলোর বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার গাছপালা, ডোবা-নালা, পুকুর ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠেছে আবাদি জমির মাটি। এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে। জমিতে ধান হচ্ছে না। নারকেল, পেঁপে সুপারি গাছের ফলন নেই। তিনি কৃষিজমির পাশে ইট ভাটা বন্ধসহ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

বসতবাড়িতে কোনো ফলদ গাছে ফলন নেই বলে জানান এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ ( এ.বি.আই) সংলগ্ন একটি বাড়ির অভিভাবক শুকরজান (৫৫)। তিনি আরো বলেন, ইঁভাটার কারণে আমার স্বামী ধান চাষ বাদ দিয়েছে। অন্য এলাকার জমিতে ধান,পাট বুনার চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রেবা ও নবাবগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম সালাউদ্দীন মসজু বলেন, শিশু শ্রম আইন লংঘন হলে দ্রত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

শিশু শ্রমিকদের বিষয়ে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসোর্স ইন স্ট্র্যাটেজিক হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ফারুক আহমদ বলেন, শিশু শ্রম বন্ধ করে শিশুদের আবার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত