ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভাষাসৈনিক রওশান আরা বাচ্চু আর নেই

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১৮  
আপডেট :
 ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:১৯

ভাষাসৈনিক রওশান আরা বাচ্চু আর নেই

ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন একজন ভাষা সৈনিক। ছিলেন শিক্ষাবিদও। সেইসঙ্গে একজন ছিলেন একজন সচেতন নাগরিক।

ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৪৮-৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পাঁয়তারা রুখে দেয়া এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামে একাট্টা ছিল বাঙালি ছাত্রসমাজ। আর এই আন্দোলনকারীদের অন্যতম ছিলেন রওশন আরা বাচ্চু। যিনি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নামেন ভাষা রক্ষার আন্দোলনে।

জীবদ্দশায় তিনি বলতেন, ‘ভাষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’ এখন থেকে কেউ আর এই কথা বলবেন না। জাতি হারালো আরেক ভাষা সেনানীকে। রওশন আরা বাচ্চুর স্থান পূরণ হওয়ার নয় বলে জানিয়েছেন দেশের অনেক খ্যাতিমান ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। শোকে আচ্ছন্ন তার নিজ জন্মভূমি কুলাউড়া।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার এই মহীয়সী নারী মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

রওশন আরা বাচ্চুর মেয়ে তাহমিদা খাতুন জানান, তার মা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এদিকে উনার ভাইপো জহির আহমেদ খান ডলার বলেন, বুধবার সকালে কুলাউড়ায় উনার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙা এই মহীয়সী নারীর জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর। তিনি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এ এম আরেফ আলী ও মা মনিরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৭ সালে পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক, ১৯৪৯ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি বিএড এবং ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এমএ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে রওশন আরা বাচ্চু ‘গণতান্ত্রিক প্রগ্রেসিভ ফ্রন্ট’-যোগ দিয়ে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইমেন স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্য নির্বাচিত হন। রওশন আরা বাচ্চু সর্বশেষ বিএড কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। অবসর নেন ২০০২ সালে। বিএড কলেজ ছাড়াও ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল, নজরুল একাডেমি, কাকলী হাই স্কুলসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলের ছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সুসংগঠিত করেন।

রওশন আরা বাচ্চুর পরিবার নানাভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দাদা আহমদ আলী পড়াশোনা করেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। তিনি ব্রিটিশ সরকারের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বে ছিলেন। চাচা ছিলেন কংগ্রেস পার্টির সদস্য। মা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও তার দেশপ্রেমের অভাবনীয় চেতনা ছিলো। রওশন আরা বাচ্চু জীবদ্দশায় বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনে যা কিছু করতে পেরেছি তার জন্য মায়ের অবদানই বেশি।’

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত