ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

মামলা না নিয়ে উল্টো ফাঁসানোর অভিযোগ, ওসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:২৬

মামলা না নিয়ে উল্টো ফাঁসানোর অভিযোগ, ওসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

পাবনার ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে উল্টো নিহত গৃহবধূ আশা খাতুনের পিতাকেই ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং ওসির অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।

বুধবার বিকেলে উপজেলার গোপালনগর গ্রামের কয়েক শ’ লোক রাস্তায় দাড়িয়ে এসব কর্মসূচি পালন করেন।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে আশার স্বজনরা বলেন, ৪ বছর আগে পার্শ্ববর্তী গোলকাটা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছফর আলীর সাথে বিয়ে হয় গোপালনগর গ্রামের আশা খাতুনের। সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে থাকা অবস্থায় ননদের স্বামী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার জা আঙ্গুরি ও জাহানারা খাতুনের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে পরিকল্পিত ভাবে আশা খাতুনকে মারপিট করে তার মুখে বিষ ঢেলে দেয় তারা। খবর পেয়ে আশার বাবার বাড়ির লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আশার পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আশা আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু আশার তিন বছরের শিশু সন্তান আরিকা তার নানাবাড়ি গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জানায়। সে জানায় তার মাকে তার বড়মা (চাচি) জাহানারা ও আঙ্গুরী পিটিয়ে ও গলাটিপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেছে। শেষে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো আশার বাবার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়।

পরে জামিনে বের হয়ে গত ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু পাবনার আমলি আদালতে ৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচারক মো. মুরাদ জাহান মামামলাটি গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য ফরিদপুর থানায় পাঠালেও পুলিশ মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। আশা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করলেও তোয়াক্কা করেননি। বিক্ষুব্ধরা অবিলম্বে ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদের অপসারণ এবং আশা হত্যার বিচার দাবি করেন।

এদিকে গৃহবধূ আশা খাতুন হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছে। তারা এই মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওসি আবুল কালাম আজাদকে দোষারোপ করে তার অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আজহার আলী সরকার, উপজেলা শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব আলী সরকার, বনওয়ারী নগর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসবকলীগ সভাপতি শাহাদত হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল আলম খান প্রমুখ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফুল কবীর বলেন, আশা হত্যার ঘটনায় ওসি আবুল কাশেমের ভূমিকা ন্যক্কারজনক।

আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম বাবু জানান, আমার মেয়ে হত্যার পর থানায় মামলা নেয়নি। ডাকাতির মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। কোর্টে মামলা করায় এখন নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতেও ওসি চাপ দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উৎকোচ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে আশা নামে কোন নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি বলে দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে গুরুত্বের সাথে ঘটনা তদন্তে ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত