ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

নতুন আইন প্রয়োগ: সড়কের হালচাল

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:২৬  
আপডেট :
 ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৪৯

নতুন আইন প্রয়োগ: সড়কের হালচাল

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে মামলা দেয়া শুরু হয়েছে আজ সাতদিন। গত ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হলেও পুলিশ ৩০ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত এ আইনে কোনো মামলা দিতে পারেনি। বর্তমানে আইনটি প্রয়োগ হলেও সীমিত আকারে মামলা দিচ্ছে পুলিশ।

গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) ডিএমপি ট্রাফিকের চারটি বিভাগের মধ্যে তিনটি বিভাগ সীমিত পরিসরে মামলার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরেই চলছে নতুন আইনের কার্যক্রম। বর্তমানে রাজধানীতে মামলার পাশাপাশি চালানো হচ্ছে প্রচারণা। আর মামলার পরিমাণও খুবই কম। রাজধানীর বেশ কয়েকটি জোনে ঘুরে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে গড়ে আট থেকে ১০টি মামলা হয়েছে।

১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পুরো সময়টা জুড়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে পুলিশ। এখনও চলছে প্রচারণা। পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে প্রয়োগ করা হচ্ছে আলোচিত এ আইন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ধীরে ধীরে পরিমাণটা বাড়ানো হবে। মামলা দেয়ার পজ মেশিনগুলো কিছুদিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের মতে, পজ মেশিন এসে গেলে পূর্ণাঙ্গভাবে মামলা দেয়ার কাজ শুরু হবে।

ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন আইনে মামলা ও জরিমানার বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যাতে জনসাধারণের কোনো ভুল-বোঝাবুঝি না হয়, সে জন্য তারা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। কেউ যখন আইন লঙ্ঘন করছেন, তখন প্রথমত তার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। এরপর তাকে থামিয়ে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি জানানো হচ্ছে। তিনি কীভাবে আইন লঙ্ঘন করেছেন, সেটিও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ধারায় তাকে মামলা দেওয়া হচ্ছে। মূলত ট্রাফিক পুলিশের প্রতি যে একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনেই এই পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তান, আজিমপুর, ফার্মগেট, মিরপুরসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা যায় নানান পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশের প্রচারণা। তারা মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি নতুন আইনের জরিমানার বিষয়ে সচেতন করছেন জনগণকে।

ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. মনজুর মোর্শেদ জানান, মামলা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ব্যস্ত সময় এড়িয়ে চলছেন। রাস্তায় যান চলাচল যখন কম থাকে, তখন মামলা দেয়া হয়। মামলা দেয়ার বিষয়টি এখনো সার্জেন্ট বা ট্রাফিক পরিদর্শকদের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়নি। অন্তত একজন সহকারী কমিশনার ঘটনাস্থলে থাকছেন। তার উপস্থিতিতে পুরো কার্যক্রম চলছে।

একাধিক পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা উল্টো পথে চলাচল করেছে এবং যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, এমন মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও পিকআপকে মামলা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা বাস স্টপেজ থাকা সত্ত্বেও মানছে না বা যেখান সেখান থেকে যাত্রী তুলছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

নতুন আইনের বিষয়ে কথা হয় আজিমপুর জোনের সার্জেন্ট উজ্বলের সাথে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা গত সাতদিন মোট ছয়টা মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও বাস রয়েছে। যারাই আইন ভাঙছেন আমরা তাদের সচেতন করছি। পাশাপাশি আমরা লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ বেশ কিছু উপায়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আশাকরি আগামী মাস থেকে আমরা পুরোদমে নতুন আইনের প্রয়োগ করতে পারব। আপাতত আমরা স্বল্প পরিসরে নতুন আইনের প্রয়োগ করছি।

নিউমার্কেট জোনের সার্জেন্ট আরমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা স্বল্প পরিসরে নতুন আইনের প্রয়োগ করছি। আমরা বৃহস্পতিবার দুইটি মামলা দিয়েছি। এর মধ্যে একটি বাসকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আমরা মামলা দেওয়ার সময় সিনিয়ররা উপস্থিত থাকেন। তাদের উপস্থিতি ছাড়া আমরা মামলার কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করিনা। মামলা দেওয়ার সময় একজন সিনিয়র সার্জেন্ট বা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বা একজন সহকারী কমিশনার উপস্থিত থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা আপাতত স্লিপের মাধ্যমেই মামলা দিচ্ছি। আমাদের পজ মেশিন আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত, নতুন আইনে পুলিশের এই মামলা দেয়ার বিষয়টি নজরে আসে শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে। রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে উল্টো পথে আসা কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সদস্যরা মামলা দেন। জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা করে।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে এটি কার্যকর করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বেশির ভাগ ধারার জরিমানা ১০ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেসব ধারায় এক মাস কারাদণ্ডের বিধান ছিল, এখন তা দুই বছর পর্যন্ত হয়েছে। আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই সর্বোচ্চ শাস্তি কত হবে তা আছে, সর্বনিম্ন শাস্তির উল্লেখ নেই।

নতুন সড়ক আইনের শাস্তি

নতুন সড়ক পরিবহন আইন-এ সড়ক নিরাপত্তা ও আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর শাস্তি হবে নূন্যতম ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড বা নূন্যতম ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা। নিবন্ধনবিহীন গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন বহন করলে অনধিক ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ট্যাক্স টোকেন না থাকার শাস্তি হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। হেলমেট না পরলে কিংবা ট্রাফিক সংকেত ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সিটবেল্ট না বাঁধলে, চলন্ত অবস্থায় চালক মোবাইল ফোনে কথা বললে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

গাড়ি চালিয়ে ইচ্ছেকৃতভাবে কাউকে খুন করলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারানুযায়ী সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে, বেপরোয়া গাড়ি চালনা দ্বারা কাউকে আহত বা নিহত করলে অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান নতুন আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, রাস্তার উল্টোদিকে গাড়ি চালানো, লেন ভঙ্গ, মোটরসাইকেলে একজনের বেশি সহযাত্রী বহন, গাড়ির ছাদে যাত্রী তোলা, ফুটপাতে গাড়ি চালানোর মতো অনিয়মগুলোকেও কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া গাড়ির ওজন ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কের ব্যবহার, গাড়ির নিবন্ধন, রুটপারমিট ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া, মোটর ড্রাইভিং স্কুল প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণ, গণ-পরিবহনের আসনসংখ্যা ও ভাড়া নির্ধারণ- নিয়ন্ত্রণ, নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আসন সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোও এই আইনে গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত