ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

আজ আমলাসদরপুর হানাদার মুক্ত দিবস

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৭

আজ আমলাসদরপুর হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ৭ ডিসেম্বর। আজকের এই দিন কুষ্টিয়ার মিরপুরের ঐতিহাসিক আমলাসদরপুর পাকহানাদার মুক্ত দিবস। এদিন মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের অর্জন হিসাবে মুক্ত হয় এই জনপদ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বহু ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে আমলাসদরপুর পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মধ্যে যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন এই এলাকার বীর সন্তানেরা। বিএলএফ প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে বিজয়।

এই দিনটির কথা মনে করে আজো গৌরবের সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে চলছে মানুষ। তারা চান নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান জানান, কুষ্টিয়া জেলার পাক বাহিনীর প্রধান অ্যাকশন ক্যাম্প গঠিত হয় আমলায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক হানাদার বাহিনীরা এখানে এসে থাকতো। বর্তমানে যেটা আমলা সরকারী কলেজ সেখানে ছিলো পাক হানাদার বাহীনিদের ঘাটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর নেতৃত্বে এই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেয়।

তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর যশোরের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে সেখানে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীরা তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ, ট্যাংক, রকেট লাঞ্চারসহ ভারী ভারী অস্ত্র নিয়ে সেখান থেকে ঝিনাইদহ দিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবুরী-মাগুড়া এলাকা দিয়ে আমলা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আসে। ১৯৭১ সালের ০৬ ডিসেম্বর মারফত আলীর নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয় আমরা চারিদিক থেকে আমলা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমন করবো। আমাদের এ আক্রমনের খবর টের পেয়ে যায় আমলা ক্যাম্পে অবস্থারনত হানাদার বাহিনীরা। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ১৭টি ভাগে ভাগ হয়ে যান। কমান্ডার আ.স.ম মুসা (চাঁদ), নুরুজ্জামান খাঁন, আফতাব উদ্দিন খাঁন, গেরিলা কমান্ডার আব্দুর রশিদ ফুরকান, আশকর আলী, রাহাত আলী, আফসার আলী, সাদেক আলীসহ আমরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যাই।

তিনি জানান, ৭ ডিসেম্বর আমরা একযোগে চারিদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। তবে এই খবর পেয়ে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত আমলার সাগরখালী ব্রীজটি ভেঙ্গে দেয় এবং আমলা থেকে পালিয়ে কুষ্টিয়ায় চলে যায়। সেই সাথে আমলায় মুক্তিযোদ্ধারা চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ উল্লাস করে। আমলায় উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য।

গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ ফুরকান বলেন, মহান এই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হলো আমরা যে হাত দিয়ে পাকিস্থানিদের হত্যা করতাম আবার সেই হাত দিয়েই আমাদের সহযোগিদের সেবা করতাম। দেখেছি হাজারো মানুষকে মরতে। পেরেছি শত্রুদের মারতে। দেখেছি মেয়েদের আহাজারি। তারা আমার আপন কেউ ছিলো না। তবে সেদিন মনে হয়েছিলো এরা সকলেই আমাদের আপনজন। এমন নির্মমভাবে মা-বোনদের হত্যা করা হয়েছিলো তা দেখে আমাদের যুদ্ধের অনুপ্রেরণা আরো বেড়ে গিয়েছিলো। আমাদের আত্মবিশ্বাস আর সাধারণ মানুষের কষ্টের আহাজারি আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে সাহায্য করেছিলো। সেদিনের সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা আমার আজো কানে বাজে। মা-বোনদের আহাজারি, শিশুর কান্না আজো আমার মনে পড়ে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সেদিনের শত্রু রাজাকার ও তাদের সহযোগিদের বিচার করে তাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হোক। এতে সেদিনের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। এদেশ একেবারে রাজাকার মুক্ত হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আশকর আলী ও রাহাত আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমলা হানাদার মুক্ত হওয়ার ৪৮ বছর পার হয়ে গেলেও এই দিবসটি পালিত হয় না। এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাঁথার কথা নতুন প্রজন্মকে জানানোর কোন মাধ্যম নেই। কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস, মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালী হানাদার মুক্ত দিবস পালন করি। অনুরুপভাবে আমরা আমলাসদরপুর মুক্ত দিবস পালন করার দাবি জানাই। সেই সাথে আমলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলক তৈরি করার দাবি জানাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাম্মদ আলী বলেন, আমলাসদরপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি আমলার বদ্ধভূমি সংরক্ষণ করার দাবি জানাই আমরা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত