ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

নতুন আইনের শিথিলতার ‘সুযোগ’ নিচ্ছে চালকরা

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৮  
আপডেট :
 ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:০২

নতুন আইনের শিথিলতার ‘সুযোগ’ নিচ্ছে চালকরা

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে মামলা দেয়া শুরু হয়েছে আজ আটদিন। গত ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হলেও পুলিশ ৩০ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত এ আইনে কোনো মামলা দেয়নি। বর্তমানে আইনটি প্রয়োগ হলেও সীমিত আকারে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। আর এ কারণে আগের মতোই বেপরোয়া চালকরা।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা যায় এখনও আগের মতোই হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চলছে, বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছে এবং ব্যক্তিগত গাড়িগুলো যেখানে সেখানে পার্কিং করা হচ্ছে।

অনেকেরই দাবি করছেন নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ এখনও শক্তভাবে আইনের প্রয়োগ করছেন না। আর বিষয়টির সত্যতাও মেলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানান, নতুন আইনে মামলা ও জরিমানার বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যাতে জনসাধারণের কোনো ভুল-বোঝাবুঝি না হয়, সে জন্য তারা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। কেউ যখন আইন লঙ্ঘন করছেন, তখন প্রথমত তার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। এরপর তাকে থামিয়ে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি জানানো হচ্ছে। তিনি কীভাবে আইন লঙ্ঘন করেছেন, সেটিও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ধারায় তাকে মামলা দেয়া হচ্ছে। মূলত ট্রাফিক পুলিশের প্রতি যে একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনেই এই পদক্ষেপগুলো নিতে হচ্ছে।

ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. মনজুর মোর্শেদ গণমাধ্যমকে জানান, মামলা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ব্যস্ত সময় এড়িয়ে চলছেন তারা। রাস্তায় যান চলাচল যখন কম থাকে, তখন মামলা দেয়া হয়। মামলা দেয়ার বিষয়টি এখনো সার্জেন্ট বা ট্রাফিক পরিদর্শকদের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়নি। অন্তত একজন সহকারী কমিশনার ঘটনাস্থলে থাকছেন। তার উপস্থিতিতে পুরো কার্যক্রম চলছে।

একাধিক পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনও নতুন আইনের শক্ত প্রয়োগ তারা করছেন না। তারা এখনও প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সীমিত পরিসরে দু-একটি মামলা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা মামলা না দিলেও যারা উল্টো পথে চলাচল করেন এবং যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, এমন মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও পিকআপের চালককে সতর্ক করছেন। এছাড়া বাস স্টপেজ থাকা সত্ত্বেও যেসব বাস যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করছেন তাদেরও সতর্ক করা হচ্ছে।

নতুন আইনের বিষয়ে কথা হয় আজিমপুর জোনের সার্জেন্ট উজ্বলের সাথে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা গত কয়েকদিনে প্রায় ছয়টি মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও বাস রয়েছে। যারাই আইন ভাঙছেন আমরা তাদের সচেতন করছি। পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ বেশ কিছু উপায়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আগামী মাস থেকে আমরা পুরোদমে নতুন আইনের প্রয়োগ করতে পারব। আপাতত আমরা স্বল্প পরিসরে নতুন আইনের প্রয়োগ করছি।

নিউমার্কেট জোনের সার্জেন্ট আরমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, স্বল্প পরিসরে নতুন আইনের প্রয়োগ করছি। বৃহস্পতিবার দুইটি মামলা দিয়েছি। এর মধ্যে একটি বাসকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মামলা দেওয়ার সময় সিনিয়ররা উপস্থিত থাকেন। তাদের উপস্থিতি ছাড়া আমরা মামলার কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করি না। মামলা দেওয়ার সময় একজন সিনিয়র সার্জেন্ট বা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বা একজন সহকারী কমিশনার উপস্থিত থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা আপাতত স্লিপের মাধ্যমেই মামলা দিচ্ছি। আমাদের পজ মেশিন আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

নতুন আইন প্রয়োগের পর সড়কের কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়ে কথা হয় এক বাসযাত্রীর সাথে। নাজমুল নামের ওই যাত্রী জানান, তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি তার। তিনি বলেন, বাসগুলো আগের মতোই বেপরোয়া। তাছাড়া তারা যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করে।

হেলমেট ছাড়া বাইক চালিয়ে আসা রমজানের সাথে কথা হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, একটু তাড়া আছে, তাই হেলমেট ছাড়াই বেরিয়ে গেছি। আমার বাসা কাছেই। নতুন আইনের বড় জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পুলিশ মামলা দেয় না। সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, নতুন আইনে পুলিশের এই মামলা দেয়ার বিষয়টি নজরে আসে শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে। রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে উল্টো পথে আসা কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সদস্যরা মামলা দেন। জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা করে।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে এটি কার্যকর করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বেশির ভাগ ধারার জরিমানা ১০ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেসব ধারায় এক মাস কারাদণ্ডের বিধান ছিল, এখন তা দুই বছর পর্যন্ত হয়েছে। আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই সর্বোচ্চ শাস্তি কত হবে তা আছে, সর্বনিম্ন শাস্তির উল্লেখ নেই।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত