ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আজ সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৮

আজ সাঁথিয়া হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে থানার নন্দনপুর ও জোড়গাছায় পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের পর সাঁথিয়া থানা সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল।

প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর নির্দেশে সাঁথিয়া হাই স্কুলের তৎকালীন শিক্ষক রুস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কাশীনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আয়েজ উদ্দিন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এলাকার ছাত্র সমাজ ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। যুদ্ধ অনিবার্য এটা আঁচ করতে পেরে এলাকার ছাত্র-তরুণরাও সংগঠিত হতে থাকেন। সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে তারা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। সেনাসদস্য কাজী মোসলেম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতাল প্রাঙ্গনে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন, রাবি’র ছাত্র নেতা ফজলুল হক, মকবুল হোসেন মুকুল, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুসা, আবু হানিফ, মোসলেম উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, আব্দুল ওহাব, সোহরাব, রউফ, মতিনসহ যুব তরুণ’রা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম (চাদু), আব্দুস সামাদ, দারা হোসেন, শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহীদ হন।

সাঁথিয়ার সংগ্রামী জনতা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সাঁথিয়া থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করে নেয় এবং পশু হাসপাতাল চত্বরে আমগাছ তলায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ১৯ এপ্রিল সাঁথিয়ার পাইকরহাটির ডাব বাগন (শহীদ নগর) যুদ্ধে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও বিডিআর। ওই যুদ্ধে ২০জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় দু’শ নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।

২৬ সেপ্টেম্বর সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং অনেক অস্ত্র উদ্ধার করে। সাঁথিয়ার গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয় ৯ নভেম্বর, পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার কালিয়ানী গ্রামে। ওই যুদ্ধে সাঁথিয়ার ৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সাঁথিয়ায় সবচেয়ে নারকীয় ও বেদনাদায়ক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ীতে। ওই দিন পাকসেনারা বাড়ি-ঘর জ্বালানো ছাড়াও রাতের অন্ধকারে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ১’শজন গ্রামবাসীকে পুড়িয়ে, গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

৮ ডিসেম্বর সকালে সাঁথিয়ার প্রায় ৪’শ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হয়ে সাঁথিয়া থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুনরায় পাকসেনারা সাঁথিয়া প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমন চালালে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পিছুহটে পাবনা চলে যায়। এভাবে ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া থানা হানাদার মুক্ত হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত