ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

হোটেল বয় থেকে মালিক, ফ্রিতে খাওয়ান গরীবদের

  নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৯  
আপডেট :
 ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:১৩

হোটেল বয় থেকে মালিক, ফ্রিতে খাওয়ান গরীবদের

অভাবের সংসারে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। গত ২২ বছর আগে বাবা-মা’র উপর অভিমান করে পরিবার নিয়ে নিজ জেলা ছেড়ে নওগাঁতে চলে আসেন। এরপর শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ডে ২৫ টাকা বেতনে হোটেলে কাজ শুরু করেন। আর সেই হোটেল বয় আজ হোটেল মালিক হয়েছেন। পরিশ্রম ও সাধনা আজ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। বলছিলাম- হাজী নজিপুর হোটেল এন্ড বিরিয়ানি হাউজ এর মালিক আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন এর কথা। বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার মহেষচন্দ্রপুর গ্রামে হলেও এখন জমি কিনে নওগাঁ শহরের চকরামচন্দ্র মহল্লায় বসবাস করছেন স্বপরিবারে।

শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আদালত চত্বর। আদালত গেটের প্রধান ফটকের বিপরীতে রাস্তার পশ্চিম পাশে ‘হাজী নজিপুর হোটেল এন্ড বিরিয়ানি হাউজ’। যেখানে সপ্তাহে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেঁচাকেনা। তবে শুক্র ও শনিবার আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অন্যান্য দিনের মতো স্বল্প পরিমাণ রান্না করা হয়। হোটেল মালিক সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০০-১৫০ জন গরীব শ্রেনীর বিশেষ করে ভিক্ষুকদের পেট পুরে ফ্রিতে খাওয়ান। যেখানে খাবার মেনুতে থাকে- মাছ, মাংস, ডিম, সবজি ও ডাল। হোটেলের সামনে চেয়ার-টেবিলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে সেখানে কোন ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দিনে ২০-২৫ জনের মতো খেয়ে থাকেন। তবে বৃহস্পতিবার সবার জানা থাকায় সেদিন বেশি মানুষ হয়ে থাকে। গত এক যুগ থেকে এভাবে মানুষদের একবেলা খাবার দিয়ে আসছেন আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন।

হোটেল মালিক আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন বলেন, অভাবের মধ্য দিয়েও অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি। গত ২০ বছর আগে বাবা-মার উপর অভিমান করে বউ ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে নওগাঁয় চলে আসি। নওগাঁতে এসে হোটেলে ২৫ টাকা দিনে কাজ শুরু করি। বেশ কয়েক বছর হোটেলে কাজ করলাম। হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে চলে গেলেন। পরে হোটেল মালিককে বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং তার দোকান চালানোর জন্য অনুমতি নেই। মালিক বললেন- যদি দোকান চালাতে পারো তাহলে চালাও। এতে আমার কোন আপত্তি নাই। এরপর ২ কেজি, ৫ কেজি গরুর মাংস রান্না বিক্রি থেকে শুরু করে আজ অনেক বেঁচাকেনা হয়। দোকানে ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করে। এরমাঝে হজ্ব করেছি। আল্লাহর রহমতে ভাল আছি। শহরের মাথা গোঁজার মতো একটু জায়গা হয়েছে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে পড়াশুনা করছে।

আলহাজ্ব আলী আজগর হোসেন বলেন, এক সময় অভাবে সাথে সংগ্রাম করেছি। ডান পা একটু ছোট হওয়ায় ঠিকমতো ভারী কাজ করতে পারতাম না। নিয়ত করেছিলাম কখনো যদি অভাব থেকে মুক্ত হতে পারি এবং ১০ টা টাকার মালিক হতে পারি তাহলে সামর্থ্য অনুযায়ী গরীবদের খাওয়াবো। আমার সেই স্বপ্ন আল্লাহ পূরন করেছেন। আর সেই ইচ্ছা থেকে সাধ্যের মধ্যে গত এক যুগ ধরে গরীব মানুষদের একবেলা খাইয়ে থাকি। কারণ অভাব কি আমি বুঝি। এছাড়া কেউ যদি আমার কাছে খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে তাকে ফিরিয়ে দেইনা। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বেশি মানুষ খেতে পারেন।

বয়োজ্যেষ্ঠ নুর জাহান ও জাহিদুল বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ভিক্ষা করে ভালমন্দ খেতে পারিনা। গত ৩/৪ বছর থেকে এ হোটেলে নিয়মিত খেতে আসি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে কখনো গোস্ত ও কখনো মাছ দিয়ে পেট পুরে খাবার খাই। আল্লাহ যেন দোকানদারের মঙ্গল করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত