ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দোহারে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের বেহাল দশা

  নবাবগঞ্জ দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:১৭

দোহারে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের বেহাল দশা

পদ্মা নদীর পাশে গড়ে ওঠা জনপদ দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রাম। এই গ্রামে অবস্থিত পোদ্দার বাড়িখ্যাত ‌মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরটি সংস্কারের অভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ, ৪৮তম বিজয় দিবস উৎযাপন করতে যাচ্ছে, সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরটি একটি কুচক্রী মহলের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোহারের পরিত্যক্ত এই পোদ্দার বাড়িটিতে ১৯৭১ সালে দোহার এবং নবাবগঞ্জের সিমান্তবর্তী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি (ক্যাম্প) ছিল। স্বাধীনতার পর বাড়িটিকে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এ বিষয়ে কথা হয় দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুলের সাথে। তিনি বলেন, একাত্তরে দোহার উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা এই বাড়িটিতে যাতায়াত করতেন। দোহার উপজেলাকে পাক হানাদারমুক্ত করতে এই বাড়িটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

জয়পাড়া, লটাখোলা এলাকার বাসিন্দা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা করম আলী বলেন, দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে এই বাড়িটি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংস্কারে তিনি পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদানও দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে এই বাড়িটির ভেতরে অবস্থান করতেন দোহার নবাবগঞ্জ ও মনিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে সুসংগঠিত হয়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটির জমি প্রায় ৫২ শতাংশ। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ইশরাশী গ্রামের মৃত আনোয়ার খান মেম্বার এই বাড়িটি লিজ নেন। দীর্ঘদিন তিনি বাড়িটি ভোগ দখল করেন। পরে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করলে দোহার উপজেলার তৎকালিন নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন লিজ বাতিল করে ভবন ও জমি দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন ও তাদের দলিলপত্র বুঝিয়ে দেন।

২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দোহার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী অখিল পোদ্দারের বাড়িটি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় এই বাড়িটি দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। সমাজের বিত্তশালীরা কেউ এগিয়ে আসলেই স্বপ্ন ব্যস্থবায়ন হতে পারে। গড়ে উঠতে পাড়ে একটি দর্শনীয় মুক্তিযোদ্ধাদের যাদুঘর। যা আগামী প্রজন্মকে দেশের প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে সাহায্য করবে। এমটাই প্রত্যাশা দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ভবন সংস্কারের জন্য টাকার ব্যবস্থা হয়েছিলো। সেই টাকার কী অবস্থা এখন জানি না।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের বিষয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি এটা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে রুপান্তর হওয়ার পর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত