ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

জামালপুরে কৃষি জমিতে মাছের খামার, বিপাকে চাষিরা

  জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:০২  
আপডেট :
 ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৪৪

জামালপুরে কৃষি জমিতে মাছের খামার, বিপাকে চাষিরা

জামালপুর সদরের শরিফপুর ইউনিয়নে আড়াইশ’ বিঘা তিন ফসলি জমি খনন করে জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এতে আমন-আউস ও ইরি-বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতে না পারায় বিপাকে পড়েন এলাকার দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষিরা।

আবাদি জমিতে জলাশয় তৈরি বন্ধ করা না গেলে কৃষি জমি কমে গিয়ে স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা স্থানীয় সচেতন মহলের।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর সদরের শরিফপুর ইউনিয়নের বেড়াপাথালিয়া ও গোদাশিমলা গ্রামে প্রায় ৩ বছর আগে দেড়শ’ বিঘা আবাদি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে মাছার খামার গড়ে তোলেন বেড়া পাথালিয়া গ্রামের রব্বানীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ওই খামার সম্প্রসারণ করতে জমির মালিকদের ধান চাষের চেয়ে অতিরিক্ত লাভের প্রলোভন দেখিয়ে এবারো প্রায় ১শ’ বিঘা জমি জমি লিজ নেয় তারা। মাছের খামারের জন্য খনন করা জমিগুলো তিন ফসলি কৃষি জমি। শত শত বছরের কৃষি জমিতে এলাকার কৃষকরা আমন, আউস ও ইরি-বোরো ধান ও সরিষাসহ সারা বছর ধরেই বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আসছেন।

ধান আবাদের চাইতে বছর চুক্তিতে প্রতিবিঘা ৮ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে এবং কারো কারো কাছ থেকে জোর করে কম দামে জমি কিনে নেন স্থানীয় গোলাম রব্বানী, রাসেল ও লিটন নামের প্রভাবশালী তিন ব্যক্তি। সরকারি আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে তিন ফসলি কৃষি জমি খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় কৃষক মো. রফিকুল ইসলান কালাচান এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রভাবশালী ওই চক্রের মাছের খামারের মাঝখানে পড়ছে তার এবং প্রতিবেশীর আরো চারটি পরিবারের ঘরবাড়ি-বসতভিটা। তারা জমি ভাড়া দেননি বলে ওই প্রভাবশালী চক্রটি তাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। ‘মাছ চাষের নামে পুরো এলাকার কৃষি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। কৃষি জমি কমে গেছে বা ওই জমি আর কোনোদিন কৃষি আবাদে ফিরে আসবে না। এভাবে কৃষি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে মাছচাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় ওই চক্রটি মৎস্য খামার প্রকল্প সম্প্রসারণ শুরু করেছে।

সম্প্রতি ওই চক্রটি মো. জুলহাস উদ্দিনের প্রায় ১৭ বিঘা জমিসহ আরো অন্তত ১০০ বিঘা জমি কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে ভাড়া নিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে খনন কাজ শুরু করেছে। কথিত এই প্রকল্প এলাকায় কৃষি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে খননের কাজ চলছে। এ নিয়ে স্থানীয় অধিকাংশ কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষের জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছে। স্বল্প জমির অনেক দরিদ্র কৃষকের জমি জলাশয়ের ভেতরে পড়ে যাওয়ায় ধান ও অন্যান্য ফসল আবাদ করতে না পারবেন না। এতে ওই সব কৃষক পরিবার এমনকি এলাকার প্রান্তির চাষিরা ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করতে না পারলে বছরের খাবার সংগ্রহ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

অপরদিকে অনেকের বসতবাড়ি খামারের ভেতরে পড়ায় বাপ-দাদার ভিটা অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে পুরো এলাকায় মাছের খামার গড়ে তোলা হলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তিন ফসলি কৃষি জমি খনন করে জলাশয় তৈরি বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কৃষি জমি খননকারী প্রভাবশালী চক্রের অন্যতম গোলাম রব্বানী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে জমি ভাড়া নিইনি। ধান আবাদে লাভ হয় না বিধায় কৃষকরাই আমাদের কাছে জমি ভাড়া দিয়ে লাভবান হচ্ছে। অনেকেই জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষি জমি খনন করে মাছার খামার গড়ে তোলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদূত্তর দিতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মাজহারুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার এখতিয়ার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির নেই। এখানে কৃষি জমি খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আইনভঙ্গ করা হচ্ছে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কৃষি জমিতে জলাশয় তৈরির বিষয়ে জামালপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিশাল এলাকাজুড়ে কৃষি জমি খনন করে জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে। বছর তিনেক আগে এভাবে জলাশয় তৈরি করে মাছের খামারের সাথে যুক্ত গোলাম রব্বানীকে তার খামার প্রকল্পের বৈধতার সপক্ষে কাগজপত্র তলব করা হয়েছে। একই সাথে নতুন করে একই এলাকায় আরো অনেক কৃষি জমি খনন করে সেখানে কী ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কি না- এসব বিষয়ে বৈধ কাগজপত্র না দেখানো পর্যন্ত কৃষি জমি খনন করে কৃত্রিম জলাশয় তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার আইন ভঙ্গ হয়ে থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত