ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ওরা ধান কুড়ানির দল

  কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:২১  
আপডেট :
 ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫২

ওরা ধান কুড়ানির দল

ওরা ধান কুড়ানির দল। তাদের দৃষ্টি কেবল ইঁদুরের গর্তের দিকে। কারণ সেখানে রয়েছে নাড়ার ফাঁক দিয়ে ইঁদুরের আপদকালীন খাদ্য হিসেবে কেটে নেওয়া মাটির নিচে গর্তে মজুদ করা ধান। ওরা সেই গর্ত খুঁড়ে বের করে আনছে সেই ধান। এছাড়া কেউ বা আবার পরিত্যক্ত ক্ষেতের নাড়ার সাথে থাকা ধান কুড়াচ্ছে। তাদের সংগ্রহকৃত এ ধান একসাথে বিক্রি করে কেউ কিনবে নতুন জামা। আবার কেউ সাথে সাথে ধান বিক্রি করে ফেরীওয়ালাদের কাছ থেকে বাহারী খাদ্যসহ হরেক রকমের সামগ্রী কিনে নিচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার দরিদ্রশ্রেনীর শিশুরা দল বেধে ছুটে যায় ফসলের মাঠে ধান কুড়াতে। কেউ পরিত্যক্ত ক্ষেতের নাড়ার সঙ্গে থাকা ধান কুড়াচ্ছে। আবার কারো হাতে খোন্তা, কোদাল আর ব্যাগ। তারা ইঁদুরের গর্ত খুড়ে বের করে আনছে ধান। যেন তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

এদিকে আপন মনে ধান কুড়াতে ব্যস্ত থাকা শিশু আছিয়া ও রুপালি দূর থেকেই সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আর ধানের শিষ তুলছে। এদের সঙ্গে ছোট ভাই মনজুও এসেছে। সবার সারা গায়ে লেগে আছে ছোপ ছোপ মাটির দাগ। জানতে চাই কুড়ানো এই ধান দিয়ে কী হবে? তারা বলে, ধান বিক্রি করে চুড়ি-ফিতা ও নিজেদের শখের জিনিসটা কিনতে পারবো!

ওইসব ধান কুড়ানি শিশুদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, মাঠের ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের শিষ এমনিতেই পড়ে থাকে। সেগুলো কুড়ানো হয়। এছাড়া ইঁদুরের গর্ত খুঁড়লে পাওয়া যায় ধান।

কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, এ বছর এ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৪৯০ হেক্টার জমিতে আমন চাষ, ২৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীন ও শুধুমাত্র ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেছে কৃষকরা। তবে ঘূর্নিঝড় বুলবুল’র তান্ডবে কিছু কিছু ধানের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ধান পাকার সময় গ্রামের ধানক্ষেত গুলোতে হানা দেয় ইঁদুর। সেখানেই গর্ত করে বাসা বাঁধে। দিনে-রাতে সমান তালে ধানের শিষ চুরি করে নিয়ে যায় সেই গর্তের ভেতর। আর ধান কাটা হওয়ার পর সেই গর্ত খুঁজে পেতে তেমন বেগ পোহাতে হয় না। সেখানেই হানা দেয় ছোট ছোট শিশু-কিশোরের দল।

ধান কুড়ানির দলের শিশু ইমরান জানায়, সকাল হলে পরেই ধান কুড়াতে মাঠে চলে যাই। ধান কুড়িয়ে আমরা এক জায়গায় জমা করি। যখন পরিমানে বেশী হবে তখন তা বিক্রি করব।

কৃষক মোজ্জাম্মেল জানান, রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধানের ক্ষেতে ভিড় করে কিছু ছোট ছোট শিশুর দল। ধান কাটার পরে নাড়ার সাথে দুই এক গোছা ধান থাকলে সেগুলো তারা কুড়িয়ে নেয়। এছাড়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বউ-ঝিরা ধান কুড়িয়ে নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান জানান, ঘূর্নিঝড় বুলবুল যেভাবে আঘাত হেনেছে তাতে অনেকটা ক্ষতির আশংকা ছিল। ধানক্ষেতের দৈহিক অবস্থানগত কারণে সে ভাবে ক্ষতি হয়নি। যে ধানগুলো পরিপক্ক ছিল সে গুলো পড়ে গেছে। এ উপজেলায় তেমন কোন ক্ষতি সাধন হয়নি। যা হয়েছে তার তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। তবে ক্ষেতে কীট-পতঙ্গের আক্রমণে অনেক ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যায় বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত