ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

মুক্তি পাচ্ছেন সেই নিরাপরাধ আজিজ?

মুক্তি পাচ্ছেন সেই নিরাপরাধ আজিজ?

যশোরের চৌগাছায় এক আব্দুল আজিজের পরিবর্তে অন্য আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুল ভেঙেছে পুলিশের। রোববার এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব।

তিনি বলেন, ‘দুজনের নাম, পিতার নাম এবং গ্রাম একই হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। আসামি আজিজের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোববার আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

আসামি আজিজের আইনজীবী যশোর বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহানূর আলম শাহিন পুলিশের কথা বলার বিষয়টি নিশ্চত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত আসামির বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।'

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর এক আজিজের পরিবর্তে পুলিশ ভুল করে অন্য আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর ঘটনা ঘটে।

২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে লোহিত মোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরদিন নবকুমার সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। বাঘারপাড়া থানায় যার নম্বর ছিল ১২। তারিখ ২৩/১০/০৯ ইং। মামলাটি আদালতে গেলে নম্বর হয় জিআর-১২৭/০৯। মামলা দায়েরের পর ২০১১ সালে ৩০ মার্চ তৎকালিন বাঘারপাড়া থানায় কর্মরত এসআই গাজী আব্দুল কাইয়ুম লুটতরাজ ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩(ক) ধারায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে ৯ আসামির মধ্যে ৭ নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি (মাঠপাড়া) গ্রামের আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে (জাতীয় আইডি কার্ডে আছে আজিজুর রহমান)। চার্জশিটে যার বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর। মামলায় ৮ ও ৯ নং আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের তসলিমের ছেলে হাশেম আলী ও নুর ইসলামের ছেলে শাহাজানকে। চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটি বদলি করে যশোরের জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে মামলাটির নম্বর হয় এসটিসি ৬১/১২।

আদালত পলাতক আসামি আব্দুল আজিজসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পুলিশ ২০১২ সালের ১ মার্চ তাখিখে আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালত আব্দুল আজিজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কয়েকদিন পর ৫ মার্চ আব্দুল আজিজ জামিনে মুক্তি পান।

আসামি আব্দুল আজিজের আইনজীবি ছিলেন যশোর বারের সাবেক সম্পাদক শাহানুর আলম শাহিন। সেই থেকে আহাদ আলীর ছেলে আব্দুল আজিজ আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেন। তবে তিন বছর আগে আসামি আব্দুল আজিজ প্রবাসে (কাতার) চলে যান। যা সিংহঝুলি গ্রামের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রবাসে চলে যাওয়ায় আসামি আব্দুল আজিজ আদালতে গরহাজির থাকেন। ফলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আবারো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরোয়ানার ভিত্তিতে ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে চৌগাছা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আজাদের নেতৃত্বে পুলিশ প্রকৃত আসামি আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে বাদ দিয়ে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আজিজকে (একই গ্রামের দফাদারপাড়ার বাসিন্দা) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

জজ আদালত সমূহ শীতকালীন অবকাশে থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আব্দুল আজিজকে নিলে আদালত তাকে জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে নিরপরাধ আব্দুল আজিজ কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। আসামি আব্দুল আজিজের বর্তমান বয়স ৪০ বছর হলেও গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজের বয়স ৬১ বছর। অপরদিকে আসামি আব্দুল আজিজের পিতা আহাদ আলী কারিগর জীবিত থাকলেও আটক আব্দুল আজিজের পিতা মৃত। আসামি আজিজের মায়ের নাম মর্জিনা বেগম হলেও গ্রেপ্তার আজিজের মায়ের নাম মৃত খাদিজা।

এ বিষয়ে আব্দুল আজিজকে আটককারী এএসআই আজাদ গতকাল শুক্রবার বলেছিলেন, ‘আসামির নাম ঠিকানা সঠিক থাকার পরই তাকে আটক করা হয়েছে। ’

তখন তিনি আরো বলেন, ‘আটক আব্দুল আজিজের পরিবার থেকেও জানানো হয়নি যে সে মামালার আসামি না। তাহলে এখন এ কথা আসছে কেন? আটক আব্দুল আজিজ যদি আটককৃত মামলার আসামি না হন তাহলে তাকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে। নাম ঠিকানা মিল থাকার কারণে আমাদের কিছুই করার নেই।’

কারাগারে থাকা আব্দুল আজিজের স্ত্রী জলি বেগম বলেন, ‘আটকের সময় বারবার বলেছি আমার স্বামী দিনমজুর। তিনি কোনো মামলার আসামি নন। তবুও পুলিশ শোনেনি। এখন আপনারা সংবাদ প্রকাশ করায় পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। তারা আদালতে প্রতিবেদন দিলে আমার নিরাপরাধ স্বামী মুক্তি পেতে পারেন।’

আজিজের ভাতিজা রাজু বলেন, ‘গ্রেপ্তারের দিন রাতে না জানাতে পারলেও পরদিন সকালে আমরা জানাই যে আমার চাচা এ মামলার আসামি না। তবুও পুলিশ শোনেনি। তবে রোববার পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দিলে চাচার মুক্তির আশা করছি।’

এ বিষয়ে গত শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে প্রবাসী আব্দুল আজিজের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন আব্দুল আজিজের ওই মামলায় আসামি হওয়া, গ্রেপ্তার ও জামিনের পর প্রবাসী হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব বলেন, ‘দুই জনেরই নাম, বাবার নাম এবং গ্রাম একই হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা আসামির আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। রোববার এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

  • সর্বশেষ
  • পঠিত