ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

আইএসের টুপি নিয়ে এখনো পাল্টাপাল্টি তথ্য

  আহমেদ ইসমাম

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:০২

আইএসের টুপি নিয়ে এখনো পাল্টাপাল্টি তথ্য

গুলশান হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিন আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ও রাজীব গান্ধীর মাথায় আইএসের প্রতীক সম্বলিত টুপি কীভাবে এলো তা নিয়ে এখনো কেউ খোলাসা করে কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। পুলিশ ও কারা অধিদপ্তর একজন আরেকজনের ঘাড়েই দায় চাপাতে চাইছেন।

এই বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আদালতও। আদালত বলেছেন, এ যেন সর্ষের ভেতরে ভূত। সারাবিশ্বের গণমাধ্যম যখন এই রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল ঠিক তখনি এই টুপি এক জঙ্গির মাথায় থাকায় জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের।

হলি আর্টিজান হামলা নিয়ে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ সরকার বলে আসছে, দেশে হঠাৎ উদয় হওয়া জঙ্গিরা দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এদের সাথে ইসলামিক স্টেট- আইএসের সংশ্লিষ্টতা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও দাবি করেন, এরা দেশীয় জঙ্গি। আইএসের সঙ্গে হয়তো যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। দেশে কোনো আইএস নেই।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, কারাগার থেকেই পকেটে করে টুপিটি এনেছিলো রাকিবুল। সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পরবর্তীতে আদালতের হাজতখানা থেকে মাথায় টুপি পরে বের হয় এই জঙ্গি। সেই টুপিই এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় সে উল্টিয়ে পড়েছিলো। রায় শেষে জঙ্গি রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশকে জানিয়েছে, টুপিটি কারাগার থেকে এনেছে।

ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান বলেন, আদালতে আসামিদের মাথায় থাকা আইএস টুপি থাকার বিষয়টি তদন্তে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন কারা মহাপরিদর্শকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতে আসামির মাথায় টুপি থাকার বিষয়ে কারাগারের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

টিপু সুলতান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রিগ্যান যেখানে নিজেই আদালতের কাছে বলেছেন এই টুপি আদালত চত্বরে অজ্ঞাত কেউ তার হাতে দিয়েছেন সেখানে আমরা আর কী বলব। কারাগারের বাহিরের কোনো বিষয় নিয়ে তো আমরা কিছু বলতে পারি না। কারাগারের গেটের ভিতর থেকে আসামিদের আমরা পুলিশের হাতে বুঝিয়ে দেই, এর পরের দায়িত্ব আমাদের না। কারাগারে প্রবেশ করার সময়ও কোনো জঙ্গির কাছ থেকে কোনো ধরনের টুপি আমরা পাই নাই।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারা অধিদপ্তরের ভিডিও ফুটেজ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আইএস’র পতাকা সম্বলিত টুপিটি কারাগার থেকে সংগৃহীত হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রায়ের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ থেকে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রোকন উদ্দীন মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল ওই মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করেন। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আট আসামিকে কারাগারের প্রধান ফটকে আনা হয়। ওই সময় তাদের তল্লাশি করে প্রিজন ভ্যানে উঠানো হয়। আসামিদের চার জনকে হ্যান্ডকাপ পড়ায় পুলিশ। তবে আসামিদের কাউকেই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পড়ানো হয়নি। আদালতে রায় ঘোষণার পর বেলা ১টা ২০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আসামিদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের কাছে রিগ্যান বলেছে টুপিটি তার পকেটেই ছিল। রিগ্যান আদালত চত্বর থেকে ফেরার সময় টুপিটি আবার প্রিজন ভ্যান থেকে অন্য কোথাও ফেলে রেখে যায়। তবে জায়গাটি সে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারাগার থেকে আনার সময় আসামিদের তল্লাশি করে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে কী আছে তা দেখা হয়। এ ধরনের টুপি তাদের কাছে কীভাবে গেল?

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে আদালতে নেয়ার সময় আসামিদের মাথায় কোনো টুপিই ছিল না, সেখানে দণ্ডিত হওয়ার পর কে বা কারা তাদের মাথায় আইএসের টুপি পরিয়ে দিল? কারা এটি সরবরাহ করল? তাহলে কি কারাগার থেকে আদালতে আনার সময় তল্লাশি ছাড়াই তাদের আদালতে আনা হয়েছিল, নাকি দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দী থাকাবস্থায়ই এই টুপি পেয়েছেন তারা। যদি কারাগারেও এ টুপি পেয়ে থাকেন তারা, তাহলে পেলেন কীভাবে? এ ধরনের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ দেশের প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আঙুল উঠেছে তাদের দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যের দিকে। যদিও টুপি সরবরাহের দায়ভার নিতে রাজি নন কেউ। নিজেদের দোষ এড়াতে একে অপরকে দোষারোপ করছে প্রশাসন।

গত ১ ডিসেম্বর আদালতে শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতকে বলেন, আইএসের টুপি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় আইএসের টুপি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আমি তো আইএস ইস্যুতে অনেক কথা বলেছি। এখন তো আমি নিজেই আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তখন হাইকোর্ট বলেন, মানবাধিকার কর্মীদের বুকে সাহস নিয়ে থাকতে হবে। তখন আইনজীবী আদালতকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা এ বিষয়ে জানে না। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষও বলছে টুপি কারাগার থেকে আসেনি। তাহলে আইএসের টুপি দিল কে? ফেরেশতা নাকি শয়তান? তখন হাইকোর্ট বলেন, সর্ষের ভেতরে ভূত। পরে হাইকোর্ট আইনজীবী জেড আই খান পান্নার নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেন।

ডিএমপির তদন্ত কমিটির প্রধান ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম জানান, তাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। দেশের ইতিহাসে প্রথম এরকম কোন হামলার ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয় গত ২৭শে নভেম্বর। রায়ে সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত