ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধান শিক্ষকের হাতে আলাদীনের সেই চেরাগ!

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২০, ১৫:১৬

প্রধান শিক্ষকের হাতে আলাদীনের সেই চেরাগ!

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এম মোবারক হোসেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিল সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর ২০০৯ সালে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে ওই বছরের নভেম্বরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি। নিয়োগ পাওয়ার পরেই তার হাতে চলে আসে ‘আরব্য উপন্যাসের সেই আলাদীনের চেরাগ’।

পৈত্রিক সূত্রে তিনি মাত্র ১৩ কাঠা জমির মালিক। চাকরি জীবনে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা টাইলস-অলা বাড়ি নির্মাণ করেন। আর সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকলেই যে কারো চোখ ছানাবড়া হবেই। কারণ বাড়িটির প্রত্যেকটি ঘরে রাজকীয় আসবাবপত্রের পসরা।

প্রায় ২/৩ বছর পূর্বে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চুরি হওয়ার পর দিনই তিনি কিনে ফেলেন আরেকটি ডিসকভার ১২৫ মোটরবাইক। এছাড়াও তার নিজেসহ পরিবারের সদস্যদের সাজসজ্জাও রাজকীয়। প্রতিটি কমপ্লিট তৈরি করতে তিনি খুলনার নামি দামি টেইলার্সে অর্ডার করেন। এছাড়াও তার দুই ছেলে-মেয়েক বাইরে রেখে ভালো কলেজে পড়া-লেখাও করিয়েছেন। বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গরুর ফার্ম।

সম্প্রতি তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি বিদেশি জাতের গরু কিনিছেন। মূলত তার পূর্বের পারিবারিক অবস্থান ও বর্তমানের সঙ্গে আমূল পরিবর্তনে অর্থের উৎসের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এলাকাবাসীসহ সুধীমহলে।

এ কারণে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. শাহাদাৎ হোসেন গোলদার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর আনা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে উপার্জিত প্রায় অর্ধকোটি টাকার অভিযোগ এনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এর মধ্য অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় শিক্ষা শাখার সহকারী কমিশনার উম্মে মুসলিমা স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালের নভেম্বরে তার নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও শৃঙ্খলা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার নিয়োগের পর থেকে অদ্যবধি আটজন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ৩০/৩২ লাখ টাকা, স্কুলের ৬ বিঘা জমির হারি বাবদ ৫ লাখ টাকা, পুরাতন বই-খাতা বিক্রি থেকে ১ লাখ টাকা, অবৈধ গাইড বই চালানো থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা, উপবৃত্তি থেকে ৩ লাখ টাকা, নবম শ্রেণিতে ভর্তি খাতে ১ লাখ টাকা, এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল বাবদ ১ লাখ টাকা, প্রশংসাপত্র ও সার্টিফিকেট বিতরণ থেকে ১ লাখ টাকা, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় খাত থেকে আদায়কৃত ৭০/৮০ হাজার টাকা, কোচিংসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ ও ২০১০ সাল থেকে অদ্যবধি বিনা রশিদে বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগে স্বাক্ষী হিসেবে এইচএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি মো. ময়নুল ইসলাম, পরিচালনা পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম গোলদার, সাবেক সদস্য মো. মোসলেম উদ্দীন গোলদার, মো. হাফিজুল জোর্দ্দার ও কামরুল ইসলাম নাম উল্লেখ করেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এম এম মোবারক হোসেনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের কাজে কিছুটা নয়ছয় রয়েছে। তারও আছে। তবে সবাই তার পেছনে কেন লাগল সেটা তার কাছে বোধগম্য নয়!’

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তিনি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত