ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

একজন পাখিপ্রেমী রাহী

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৬

একজন পাখিপ্রেমী রাহী

ক্যামেরার সাথে সখ্যের সময় থেকেই তার প্রণয় গড়ে উঠেছিল এদেশের শ্যামল প্রকৃতির চপল পাখিদের সঙ্গে। আর তাই গত ৭-৮ বছর ধরে অনেক কিছু নিয়ে ছবি তুললেও পাখির ছবি রয়েছে এক বিশাল জায়গা নিয়ে।

‘পাখি আমি ভালোবাসি। পাখি নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনাও করি আমি। পাখিকে আমি চিনি, পাখি আমাকে চেনে। পাখির চোখের আমি সবুজ শ্যামল বাংলাকে দেখতে চায়। এখনো বাতাসে উড়ে যাওয়া একটা সাধারণ হাঁস দেখেও আমি বলে দিতে পারি তা কোন প্রজাতির, কোথায় থাকে, কী খায়, পাখির সঙ্গে আমার এই ভালোবাসার জন্যই আমার ছবির বিশাল অংশ জুড়ে পাখি’ পাখি নিয়ে নিজের গভীর আবেগ এভাবেই তুলে ধরলেন ঠাকুরগাঁও শহরের তরুণ ব্যবসায়ি রেজাউল হাফিয রাহী ।

কথপোকথনে ঠাকুরগাঁওয়ের পাখি প্রেমিক রেজাউল হাফিয রাহীর গল্প তুলে ধরেন আমাদের প্রতিবেদক।

ক্যামেরা নিয়ে সারাদিন বনে জঙ্গলে ঘুরেন রাহী বিভিন্ন পাখিদের ছবি তোলার জন্য। তার ছবি তোলার মাধ্যমে ফুটে উঠে প্রকৃতির পাখিদের অপার সৌন্দর্য।

রাহী জানান, পাখির ছবি তোলার শখ অনেক দিনের। কিন্তু সে তো আর খুব একটা সহজ কাজ নয়, কারণ পাখি তো আর এক জায়গায় বসে থাকে না। তবে ছবি তুলতে তুলতে ক্রমশ বুঝতে পারলাম, কিছু পাখি আছে যা একরকম আমাদের বাড়ির লোকই হয়ে গেছে। তাদেরও একটা পাড়া আছে, তার বাইরে বেশি যায় না এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে তাদের সুন্দর ছবিও তোলা যায়।

তিনি আরো জানান, আমি ঠাকুরগাঁও বুড়ির বাঁধ এলাকা থেকে কমন মারগেঞ্জার নামের দুটি পাখির ছবি তুলি। সেই ছবি দিয়ে পাখিটি প্রথম বাংলাদেশে রেকর্ড করা হয়। আর এই ছবির জন্য আমাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরষ্কৃত করা হয়।

ঠাকুরগাঁও শহরের হাজিপাড়ায় রাহীর বাসা। ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ঠাকুরগাঁও ইলেকট্রনিক্স। ব্যবসার কাজে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে প্রতি শুক্রবার তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে বের হন ছবি তুলতে। বিভিন্ন বনে জঙ্গলে বিলুপ্ত ও অচেনা পাখিদের ছবি তোলেন তিনি। নিজের ক্যামেরার মাধ্যমে পাখিদের সৌন্দর্য তুলে ধরেন মানুষের কাছে।

ছবি তোলার পাশাপাশি পাখি রক্ষাণাবেক্ষণ করেন তিনি। বন্দি খাঁচার পাখিদের মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিতে ভালবাসেন। কেউ যদি পাখি শিকার করে সে পাখি শিকারীদের অনুরোধ করেন পাখি না শিকার করার জন্য। ‘দেশীয় পাখি কেউ মারবেন না, ধরবেন না এমনকি পুষবেন না’ এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করলেন রাহী। এ জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের অনেকে তাকে পাখি ভাই বলে ডাকে আর সেটা তার কাছে ভালই লাগে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পাখি প্রেমি রাহী প্রায় ১৭০ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তার তোলা ছবি ছাপানো হয়েছে অনেকবার। এছাড়াও ২০১২-১৩-১৪ সালে অনেকবার ফটো একজিবিশনে পদক পেয়েছেন তিনি।

তার পাখির ছবি তোলার মধ্যে রয়েছে, দেশী পাখির তালিকার হড়িয়াল, নীলকণ্ঠী, হলদে পাখি, গো-বক, ভাত শালিক, কাঠ-শালিক, বড় ঝুঁটি বুলবুলি, বাতাবি কাঠ ঠোঁকরা, ছোট মাছরাঙা, শঙ্খ চিল, হুতোম প্যাঁচা ইত্যাদি পাখি যেন প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলার অফুরন্ত পক্ষীভান্ডারকে। অন্যদিকে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে, চখা-চখি, মেটে হাঁস, ভূতি হাস, নিশির, কালো গলা মানিক জোড়, কালো শির রাজহাঁস এদের সবাই ফ্রেমবন্দি হয়েছে তাঁর ক্যামেরায়। সেদিক থেকে বিদেশী পাখিরাও কম যায়নি। পেশার খাতিরে নানান দেশে ঘুরতে হয়েছে তাঁকে। সেই সুযোগে রথ (পড়ুন পাখি) দেখা, কলা বেচা দুটোই সেরেছেন এই পাখি প্রেমিক। বিদেশী পাখিদের তালিকাটা তাই অলংকৃত করেছে ইয়েলো হুডেড ব্ল্যাকবার্ড। গ্লসি এমারেল্ড স্টারলিং, রেড লরি, অ্যামেরিকান ফ্লেমিঙ্গো, উড ডাক, অস্ট্রিচ, নিকোবার পিজিওন, ভিক্টোরিয়া ক্রাউনড পিজিওন, বালি ময়না প্রভৃতি বিভিন্ন জাতের আর বিচিত্র সাজের পাখিরা।

এছাড়াও ছবি সংক্রান্ত সকল বিষয়েই তার উৎসাহ। এদেশের আলোকচিত্রী এবং তাদের মান নিয়ে গর্বিত তিনি। ‘এ দেশের আলোকচিত্রের মান বিশ্বমানের। দু বছর অন্তর অন্তর হওয়া ছবিমেলা সেটারই প্রমাণ। আমাদের আলোকচিত্রীরা বর্হিবিশ্ব থেকে অনেক পুরস্কার, অনেক সম্মান কুড়িয়ে আনছেন। এটা নিঃসন্দেহেই গর্ব করার মতো বিষয়’ জানালেন পাখি প্রেমিক রেজাউল হাফিয রাহী।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত