ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঠাকুরগাঁওয়ে মহাজোটের শিবিরে ভাঙন!

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৬  
আপডেট :
 ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৫

ঠাকুরগাঁওয়ে মহাজোটের শিবিরে ভাঙন!

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার ৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তালিকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন ২৫৮ জন। আর বাকিগুলো শরীকদের জন্য।

এদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল উপজেলার আশিংক) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য (ওয়ার্কাস পার্টির) নেতা মো. ইয়াসিন আলী ও মহাজোটের শরিক দল (জাপার) হাফিজ উদ্দিনের মধ্যে দলে দরকষাকষি চলছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা মার্কার প্রতীক দেওয়া হয় বর্তমান ওয়ার্কাস পার্টির এমপি ইয়াসিন আলীকে।

ফলে মহাজোটের এই আসনে ভাঙন তৈরি হয়ে গেছে। ইয়াসিন আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতির আগে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী অংশ তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

কারণ, সবার ধারণা ছিল ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে এবার স্বতন্ত্র অথবা দলীয় পরিচয়ে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকবেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই ধারণাও যে ভুল প্রমাণিত হয়। যার ফলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এমদাদুল হক দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন।

আর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হকের পক্ষে মাঠেও নেমে পড়েছেন। এছাড়া মহাজোটের শরিক দল জাপার প্রার্থী হাফিজ উদ্দিনও দলের প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঝে লড়াই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

অপরদিকে মহাজোটের কোন্দলকে কাজে লাগাতে মরিয়া বিএনপির একক প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।

দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ থেকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ছিল। গত চারটি নির্বাচনে তারা দলীয় প্রার্থী পায়নি। ইতিপূর্বে মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থীও ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে।

দলীয় প্রার্থীর দাবিতে আওয়ামী লীগ সভা-সমাবেশ, আন্দোলনও করেছে। কিন্তু তাদের দাবি অপূর্ণই থেকে যায়। এবারও মহাজোটের প্রার্থী করা হয়েছে ওয়ার্কাস পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলীকে।

মহাজোটের তিনজন প্রার্থীর সামনে বাধা বিএনপি। ফলে দলীয় কোন্দলের কারণে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নৌকা প্রতীক পেয়েও হতাশায় এখন মহাজোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলী। আর আওয়ামী লীগের বিশাল একটি সর্মথক গোষ্ঠী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আর জাপার পার্টির হাফিজ উদ্দিনও দলীয় ভাবে অংশগ্রহণ করায় মহা সংকটে মহাজোটের শরিক দলের নেতারা।

আর এই আসন থেকে পরপর তিনবার বিএনপি প্রার্থী হিসেবে হেরে যাওয়া জাহিদুল ইসলাম শেষ বারের মত সুযোগ দেওয়ার জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চান।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমরা আগের থেকে অনেক সু-সংগঠিত হয়েছি। যার প্রমাণ উপজেলা নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। সুষ্ঠ ভোট প্রদানের সুযোগ হলে আসনটি এবার বিএনপির হবে।’

বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই আসনটি মহাজোটের দখলে। আমি তিনবার নির্বাচন করে এখানে পরাজিত হয়েছি। আমাকে শেষ বারের মত জনগণ যদি সুযোগ প্রদান করে তাহলে আসনটিকে উন্নয়নের মডেলে পরিণত করবো।’

‘মানুষ এবার পরিবর্তন চায় তাই ধানের শীষের বিজয় হবে বলে মতব্যক্ত করেন এই প্রার্থী।’

জাপার প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘জোট থেকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীকে নৌকা মার্কার প্রতীক দিয়েছে। তাই আমি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে থাকবো। পূর্বে এই আসনে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে উন্নয়ন করেছি। এবারো জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।’

মহাজোটের প্রার্থী নৌকা প্রতীক পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘মহাজোটের সিদ্ধান্ত মতে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

‘ওয়ার্কাস পার্টি ও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকায় বিজয় নিয়ে আসবে’ বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যেন কোন নেতাকর্মী কাজ না করেন সেজন্য অনুরোধও করেন এই প্রার্থী।

এদিকে আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীরা মনে করেছিল, দলের যে কেউ মনোনয়ন পেলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হত। কিন্তু নৌকা প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলী। এ খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল। তাই বিএনপির শিবিরে বইছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

স্থানীয়রা বলছেন, এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুলের সঙ্গে নির্বাচনে ভোট যুদ্ধ হবে। মহাজোটের প্রার্থী সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারবেন কি না সন্দেহ।

ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হলে এ আসন আবার মহাজোটের থাকতো। ২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছেন বলে মহাজোটের প্রার্থী এই আসনে জয়ী হয়েছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ফুরফুরে মেজাজে চায়ের আড্ডায় নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচন নিয়ে নির্ভার-উদ্বেগবিহীন তারা। আওয়ামী লীগের সমর্থিত স্বতস্ত্র প্রার্থীকে জয়ী করার লক্ষ্যে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা অবশ্য হাসি হাসি মুখে বললেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। আমরা কাউকে দুর্বল প্রার্থী ভাবছি না। কারণ দলের স্বতস্ত্র প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সর্মথকদের মতামতে।’

জাপা নেতা হোসেন বলেন, ‘বিরোধী শিবিরে শক্তিশালী প্রার্থী থাকবে, এটা ভেবেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে মহাজোটের প্রার্থী অন্য শরিক দলকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন হাইকমান্ড। তাই মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে কয়েকজন। আমরা সাংগঠনিক ভাবে অনেকাংশে শক্তিশালী সেটি কাজে লাগিয়ে লাঙ্গল মার্কার জয় নিয়ে আসবো।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত