ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি আজ হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৯

পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি আজ হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ভুলতা সড়কের পাশে ঝাউগড়া এলাকায় পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি এখন আর পরিত্যক্ত নেই। সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে উঠে শিক্ষার্থীদের পদচারনায়।

বিমানবন্দরটি এখন শত শত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। এক সময় এলাকার লোকজন এখানে গবাদিপশু চড়াতেন। কিন্তু চার বছরে বদলে গেছে এ পরিত্যক্ত স্থানটির দৃশ্যপট।

এমনকি বদলে গেছে ঝাউগড়া এলাকার চালচিত্রও। পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে গড়ে উঠেছে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই)। এ স্থানটি পুরাতন বিমানবন্দর বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে এখানে পাকসেনাদের শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে হেলিপ্যাডসহ বন্দরটির বেশ কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর থেকে দীর্ঘদিন এ জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।

২০১৫ সালে ৩২ বিঘা জমির উপর দেশের ১৬তম এ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। বর্তমানে এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা এখানে গ্রহণ করছেন চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স।

এখান থেকে শিক্ষা শেষে খুব সহজেই কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ফসল, মসলা উৎপাদন, উদ্যান, পোকামাকড় দমন, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, কৃষি সম্প্রসারণ, পশু পাখি পালন ও মৎস্য চাষের উপর ডিপ্লোমা কোর্সে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন, মৃত্তিকা গবেষণা, ধান গবেষণায়ও এখান থেকে ডিপ্লোমা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। এসএসসি পাশ করেই চার বছরে মেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হতে পারছেন শিক্ষার্থীরা।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পঞ্চম সেশনের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, তিনি কৃষির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। বাড়ির কাছাকাছি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় তিনিসহ আরো অনেকেই এসএসসি পাশ করেই এখানে ভর্তি হয়েছেন। আর ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রতি সেশনের জন্য তিন হাজার দুইশত টাকা দিতে হচ্ছে।

শুধু ঝাউগড়া এলাকা থেকে নয় আড়াইহাজারের বাইরে থেকেও অনেকে এখানে আসছে কৃষি প্রশিক্ষণ নিতে। দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থাও রয়েছে।

কথা হয় নরসিংদী এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী ছনিয়া আক্তারের সাথে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখানে পঞ্চম সেশনে অধ্যায়ন করছেন। কলেজের পাশে ছেলে মেয়েদের আলাদা হোস্টেল রয়েছে। এতে দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ কবির হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এখান থেকে শিক্ষার্থীরা পাশ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুব সহজেই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ কৃষি বিভাগে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭৩ শিক্ষার্থী বর্তমানে চার বছর মেয়াদী কোর্স গ্রহণ করছেন। ১২ জন শিক্ষক এখানে কর্মরত আছেন।

আড়াইহাজার পৌরসভার মেয়র সুন্দর আলী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি এ এলাকার দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কারণে কৃষিখাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

ঝাউগড়া এলাকায় তৎকালীন বিমানবন্দরটি ছিল পরিত্যক্ত। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এ পরিত্যক্ত জায়গাটি। বিশাল ক্যাম্পাস। অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা। স্থানীয় এমপি নজরুলল ইসলাম বাবু’র প্রচেষ্টায় অজোপাড়াগাঁয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল কাদির বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়েছে। সীমিত সম্পদ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ঘাটতি কমাতে ফলনশীল শস্য আর প্রযুক্তি উদ্ভাবন ঘটাতে ডিপ্লোমা গ্রহণকারীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন।

এখান থেকে পাশ করে চাকরি করা ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে একটি খামার করে নিজের বেকারত্ব ঘোচাতে পারবেন।

স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আড়াইহাজারের ঝাউগড়ায় কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটটি একটি মডেল হয়ে থাকবে। এখানে লেখাপড়া করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা আসছেন। এতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হবে। অন্যদিকে কৃষিতে সমৃদ্ধ হবে দেশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত