ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যেখানে কারণ ছাড়াই দিতে হয় ৪৫ টাকা

  বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১০:৪২  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০১৯, ১০:৪৯

যেখানে কারণ ছাড়াই দিতে হয় ৪৫ টাকা

কোনো যাদুঘরও নয়, চিড়িয়াখানাও নয়। মাত্র ২০ হাত রাস্তা পায়ে হেটে যাওয়ার জন্য দেশ বিদেশ থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীদের অকারণে দিতে হয় ৪৫ টাকা করে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাসপোর্ট প্রতি আছে ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা আদায় করার। বাকি টাকা চলে কার পকেটে যাচ্ছে, তা কেউ জানে না।

এ অর্থ দিতে হচ্ছে বেনাপোল স্থল বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল চার্জ হিসেবে। এর সাথে সুযোগ বুঝে পাসপোর্টযাত্রীদের নিকট থেকে উৎকোচ দাবি করছে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।

এখানে নিরাপত্তার কাজে সরকারি বেসরকারি এত বাহিনী রয়েছে যে, যে বাহিনীকেই এখানে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, দুদিন যেতে না যেতেই তারা পাসপোর্টযাত্রী ও দালালদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত থাকে। আর এ নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে।

দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে নিয়ম রয়েছে পাসপোর্টযাত্রীদের দেখভাল এর দায়িত্বে থাকে শুধুমাত্র কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন পুলিশ। কিন্তু এ নিয়ম দেশের আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট বেনাপোলে মানা হচ্ছে না।

এখানে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, এর পাশাপাশি রয়েছে আনসার, আর্মস পুলিশ, ও পিমা নামে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা। শুধুমাত্র ইমিগ্রেশন পার হয়ে নোম্যান্সল্যান্ডে যেতে একজন পাসপোর্টযাত্রীকে ৭ জায়গায় পাসপোর্ট দেখাতে হয়। সাথে থাকে নানা রকম হয়রানি।

এ পথে প্রতিদিন শত শত দেশী বিদেশী পর্যটকরা ভারতে যায়। কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টে এসে পাসপোর্টযাত্রীরা পড়ে যায় বিড়ম্বনায়। যাওয়ার সময় যাত্রীদের ল্যাগেজ স্কানিং মেশিনে দেওয়ার সময় সেখানে আনসার সদস্যরা ও কাস্টমসের সিপাইরা দাঁড়িয়ে যাত্রীদের নিকট থেকে পাসপোর্ট দেখার নাম করে অর্থ দাবি করে। কেউ কেউ না বুঝে টাকা দিয়েও চলে যায়।

পাসেঞ্জার টার্মিনালের শেষ প্রান্তে আর্মস পুলিশ ও পিমার লোকজন পাসপোর্ট ও টার্মিনাল ফি’র কাগজ চেক করে। এরপর ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বহির্গমণে দাঁড়িয়ে থাকা আনসার ও আর্মস পুলিশের সদস্যরা পাসপোর্টে ভ্রমণকর দেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখার নাম করে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন অহেতুক প্রশ্ন করে তাদের কাছে দাবি করে অর্থ।

নোম্যান্সল্যান্ডের পাশেই ২/৩ জন ইমিগ্রেশনের পুলিশ একই কাজ করেন পাসপোর্টে সিল হয়েছে কিনা, কি মাল নিয়ে যাচ্ছেন। এসব যাবে না এসব বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে।

আবার পাসপোর্টযাত্রীরা ভারত থেকে ফিরে আসার সময় চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ইমিগ্রেশন পুলিশ থেকে শুরু হয় বিড়ম্বনা। তারা সিল মেরে দেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট প্রতি একশ‘করে টাকা চায় এবং অনেকে এটা দেয়ও।

এরপর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মস পুলিশ তাদের কাছে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দাবি করে। এসব আর্মস পুলিশ পাসপোর্টযাত্রীদের সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে বলে আবার কখনো বলে আপনাদের মালামাল বিজিবি রেখে দিবে আমাদের কাছে পাসপোর্ট দেন আমরা পার করে দিব।

এসব আর্মস পুলিশ সারাদিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থেকে তাদের নিজ দায়িত্ব পালন না করে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করে। তারা বন্দরের দেওয়া চেয়ারে বসে অবসর সময় পার করে আর এসব অনৈতিক কাজ করে থাকে।

ঢাকা থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী আলমগীর হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের ২০ হাত রাস্তা হেটে বেনাপোল স্থল বন্দরকে ৪৫ টাকা টার্মিনাল চার্জ দিতে হয়। আমরা দূর দূরান্ত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রীরা কেন বেনাপোল বন্দরকে সরকারি ৫০০ টাকা ভ্রমন ট্যাক্স বাদে এই ৪৫ টাকা দিবো। এর কোন কারণ খুঁজে পাই না।

মুন্সিগঞ্জের পাসপোর্টযাত্রী আমিনুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা বিদেশগামী পাসপোর্টযাত্রী। বন্দরে যেখানে দেখভালের কাজ করবে নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন। কিন্তু সেখানে আনসার, আর্মস পুলিশ, বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরী ও বিজিবি কেন? একই পাসপোর্টযাত্রীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকদের কাছে কেন জবাবদিহি করবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

স্থানীয় ও সাধারণ পাসপোর্টযাত্রীরা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যদি নিজেদের ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে জিনিসপত্র নিয়ে আসি তার মধ্যে অবৈধ কোন কিছু থাকলে কাস্টমস তা আটক করবে। বৈধ পণ্য ও একজন পাসপোর্টযাত্রী কি পরিমাণ ব্যাগেজ রুলের আওতায় মাল পাবেন কাষ্টমস তা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর ১০ হাত দূরে সেই পণ্য আবার বিজিবি সদস্যরা খোলা জায়গায় টেবিল চেয়ার দিয়ে তল্লাশি চালায় এটা খু্বই জন্য অসন্মানজনক।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের নিয়ম থাকে তাহলে কেন বিজিবি, কাষ্টমস এবং অন্যান্য সংস্থার লোক এক জায়গায় তল্লাশি করে না। বার বার ল্যাগেজ খুলতে খুলতে হয়রানি হতে হয় পাসপোর্টযাত্রীদের। বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত একজন যাত্রীকে কত জায়গায় যে ব্যাগ খুলতে হয় তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।

এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা পাসপোর্টযাত্রীদের তল্লাশি বা হয়রানিমূলক কোন কাজ করি না। পাসপোর্টযাত্রীরা বন্দরের এ ভবন ব্যবহার করেন তার বিনিময়ে আমরা ৪১ টাকা ৭৫ পয়সা বন্দর চার্জ নিয়ে থাকি। আমরা তাদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, বাথরুমের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি দিয়ে থাকি। অতিদ্রুত এখানে যাত্রীদের জন্য ট্রলিরও ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু বেনাপোল বন্দর এসব সুযোগ সুবিধার যাত্রীদের প্রয়োজন নেই বলে একাধিক পাসপোর্টযাত্রীরা অভিযোগ করে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখানে তো আমরা বসার জন্য আসেনি। আমরা যত দ্রুত ইমিগ্রেশন করে ভারতে যেতে পারবো তত দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। এখানে নেই ট্রলির ব্যবস্থা, নেই কোন হোটেল রেস্তোরা। শুধু মাত্র এই ভবনের মধ্য দিয়ে ২০ হাত জায়গা পার হতেই দিতে হচ্ছে এই টার্মিনাল চার্জের ৪৫ টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিব

  • সর্বশেষ
  • পঠিত