ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডুমুরিয়ায় তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা

  খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১৫:১৫  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০১৯, ১৫:২০

ডুমুরিয়ায় তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা

গ্রামীণ মেঠোপথ ধরে এগোতে এগোতে হঠাৎ একখণ্ড সবুজের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। সেখানে একপা দু’পা হেঁটেই দেখা গেল তরমুজের ক্ষেত।

চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। তরমুজ তুলে জড়ো করছেন কৃষক। স্তূপ করে রাখছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনেরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দাম কষাকষি মাধ্যমে চূড়ান্ত করছেন।

ওই তরমুজ ট্রাক-ট্রলি বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে তরমুজ চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন।

এই চিত্র খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের তক্তামারি গ্রামের। স্থানীয়রা বলছেন, এবারই সর্বপ্রথম অধিক পরিমাণে তরমুজ চাষ করা হয়েছে এই উপজেলায়। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে তক্তামারি গ্রামে।

কৃষকেরা বাংলাদেশ জার্নালকে বলছেন, রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। তাই তারা প্রতি বছরই তরমুজের চাষ করবেন বলে আশা রাখেন।

সবুজ সোনার আশায়, আমন ধান কাটা শেষ হতে না হতেই শুরু হয় তরমুজ লাগানোর প্রস্তুতি। বার বার চাষ দিয়ে দ্রুত মাটি শুকিয়ে রোপন করা হয় তরমুজের বীজ। কৃষকরা মনে করেন আগে লাগালে আগে তরমুজ পাওয়া যায় এবং ভাল দামে বিক্রি করা যায়। এ ধারনা থেকেই উপজেলার কৃষকের মাঝে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়েছে আগাম তরমুজ চাষে। তাই নারী-পুরুষ সবাই মিলে সারাদিন শ্রম দিয়েছেন তরমুজ ক্ষেতে।

ডুমুরিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সুত্র মতে, এ বছর প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন। বিক্রি হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪২০ মেট্রিক টন, যার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা।

এদিকে উপজেলার তক্তামারি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষি কামাল বাওয়ালী (৪০) এ বছরই প্রথম নিজের ও অন্যের জমি মিলিয়ে মোট সাতবিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মৌসুমের আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মহাজনরা তরমুজ নিতে এলাকায় চলে আসেন এবং তরমুজ সংগ্রহ করতে এলাকায় অবস্থান করেন। ইতিমধ্যে কামাল ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে মহাজনদের কাছে প্রায় আট লাখ ৫৪ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে আরও বলেন, ৮০’র দশক পর্যন্ত এ এলাকার কৃষকরা মারাত্মকভাবে দারিদ্রতায় ভুগেছে। পরবর্তী সময়ে কৃষি কার্যালয়ের সহায়তায় ধানসহ অন্যান্য নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে তারা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে।

এসময় কামাল বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ডুমুরিয়ার পতিত জমিতে এখন তিনটি ফসল হচ্ছে এবং দিন যত যাবে এর প্রসারও তেমনি বাড়বে। এ সম্ভাবনাকে আরও ফলপ্রসু ও গতিশীল করার জন্য, সার্বিক সহায়তার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৪ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করতে ব্যয় হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো। ফসল ভাল হলে বিক্রি হয় প্রতি বিঘা ১ লাখ টাকারও বেশি। লাভের আশায় পরিশ্রম করে, মাত্র ৬০ দিনেই ফসল পাওয়া যায়, তাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন তারা।

কৃষি কার্যালয়ের হিসাব মতে, রবি মৌসুমে বোরো আবাদ করলে এক হেক্টর জমিতে চাষাবাদ খরচ হয় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হবে ৬ মেট্রিক টন। ১৫ টাকা কেজি দরে মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তরমুজ চাষে এক হেক্টর জমিতে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার একটু বেশি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজ উৎপাদন হবে কমপক্ষে ৩০ মেট্রিক টন। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে হবে প্রায় নয় লাখ টাকা। তরমুজে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এখন তরমুজ চাষের প্রতি ঝুঁকছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এ বছর আবহাওয়া বেশ অনুকূলে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের সেচ খরচ কম হয়েছে। তবে নিচু জমিতে পানি জমে একটু ক্ষতি হলেও ফলন ভালো ও বড় আকারের তরমুজ ফলনে চাষিরা লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, লবণাক্ত এসব জমিতে পাকিজা, সুইট ড্রাগন ও প্রাউন্ড জাতের তরমুজ ভাল হয় তাই কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে এসব জাতের বীজ রোপন করছেন।

মাঠে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে তরমুজ চাষ সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে আরও বলেন, মাটি তৈরি থেকে বালাই দমন পর্যন্ত এমনকি তরমুজ বিক্রির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সকল চাষিকে সহায়তা করা হয়েছে। মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে।

ব্লুগোল্ড প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় খাল খনন করে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের মাঝে তরমুজের বীজ সরবারহ করা হয়। এভাবেই কৃষির মাধ্যমেই কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য, বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত