বর্ষায় চাঁই বানানো ও বিক্রির ধুম
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৯, ১১:২৬
রূপগঞ্জের নগরপাড়া বাজারের এক কোণে বসে আপন মনে চাঁই বুনছেন খালেক মিয়া। প্রতিদিন এক জায়গায় তিনি থাকেন না। বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঘুরে ঘুরে তাৎক্ষণিক অর্ডার নিয়ে মানুষের ইচ্ছামতো মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে খ্যাত চাঁই তৈরি করে দিচ্ছেন তিনি।
চাঁইয়ের ধরন ভেদে মূল্যও হরেক রকম হয়ে থাকে। তার কাছে সর্বনিন্ম ২৫০ টাকার চাঁই থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা মূল্যের চাঁইও পাওয়া যায়।
খালেক মিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বর্ষার পানি আইতাছে, জোয়ারের পানিতে নতুন মাছ ধরার জন্য জেলেরা চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন। কেউ ছোট আবার কেউ বড় চাঁই বানানোর অর্ডার দিচ্ছেন। তবে মাঝারি সাইজের চাঁইয়ের চাহিদাই বেশি।
উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কাজীবাড়ি এলাকার আবুল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বছরের এ সময়টাতে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। জমির আইল কেটে চাঁই বসিয়ে দিলেই নতুন পানির সাথে ভেসে আসা মাছগুলো চাঁইয়ে আটকা পড়ে যায়। এছাড়া নদীর তীরে বাঁশের খুঁটির সাথে চাঁই বেঁধে রাখলে সকালে বাইম, বড় বড় ইছা, কৈ, শিংসহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায়।
উপজেলার খামার পাড়া এলাকার হবু মিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, চাঁইয়ের মাধ্যমে নতুন পানির মাছ খাওয়ার মজা অনেক। গ্রামের খাল বিলে মাছ ধরার পুরনো উপকরণের একটি হচ্ছে চাঁই। বর্ষার আগমণে নানা প্রজাতির দেশি জাতের ছোট মাছ ও পোনার বিচরণ বাড়ছে।
চিংড়ি ও দেশি মিঠা পানির ছোট মাছ ও পোনা ধরার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের তৈরি বিশেষ ফাঁদ। মাছ ধরার এ ফাঁদের পরিচিতি ‘চাঁই’ নামে। এই চাঁই বুনে বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ সচ্ছল জীবনযাপন করছেন।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে এ অঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় শুরু হয় চাঁই দিয়ে মাছ ধরা। বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ দিয়ে নদী-খালে, বিলে ৪-৫ ফিট ফাঁকে ফাঁকে বসানো হয় একটি করে চাঁই। পানিতে চাঁই বসানো হয় মূলত চিংড়ি মাছ শিকারের জন্য।
কিন্তু ধরা পড়ে পুঁটি, বেলে, টেংরাসহ সকল প্রকারের ছোট মাছ। চাঁইগুলো প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হয় উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। উপজেলার চাহিদা পূরণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় এসব চাঁই। উপজেলার কায়েতপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাঁই তৈরি হচ্ছে।
চাঁই তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ। এই বাঁশগুলো উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। একটি বাঁশে হয় ৬টি চাঁই। প্রতি ১০০টি চাঁই বানাতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। শ্রমিকরা প্যাকেজ আকারে চাঁই বানানোর কাজ করে।
মাপ মতো বাঁশ কাটা, শলা তোলা, শলা চাঁছা, সুতা দিয়ে খোল বাঁধা, চটা বাঁধা, মুখ বাঁধা চুক্তি ভিত্তিতে করে থাকেন। এতে প্রতি শ্রমিক গড়ে দৈনিক আয় করেন ৩০০ টাকা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। যা চলতে থাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে মাছ ধরার এই উপকরণটির বাজারজাত ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি