ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

৩শ’ মাদক স্পটে ৫০ হাজার মাদকসেবী

  রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০১৯, ০৯:৫৯

৩শ’ মাদক স্পটে ৫০ হাজার মাদকসেবী
ফাইল ফটো

রূপগঞ্জের অর্থনীতি মাদক বাণিজ্যের কালো থাবায় ফোকলা হয়ে পড়েছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন সমীক্ষা লব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, এখানে প্রায় ৫০ হাজার মাদকসেবী রয়েছে। বছরে এসব মাদকসেবীদের জন্য অপচয় হয় শতকোটি টাকা।

রূপগঞ্জে মাদকের স্পট রয়েছে ৩’শ এর উপরে । এর মধ্যে চনপাড়া পূর্ণবাসনে মাদক স্পট রয়েছে এক’শর উপরে। আর মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ৪’শ। খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ১২’শ। শটকাট ফর্মুলায় বড়লোক হওয়ার আশায় অনেক তরুণ ও নারীরাও এ পেশায় ঝুঁকছেন।

মরণ নেশা গাজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নানা ধরণের নেশায় সয়লাব হয়ে গেছে রূপগঞ্জ। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে হাজার হাজার তরুণের জীবন বিপন্ন। মাদক সেবন করে মাদকাসক্তরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।

গত এক দশকে মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় ২৩ ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫’শতাধিক। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও রাঘবোয়ালরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। সব সরকারের আমলেই এরা বহাল তবিয়তে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

ফলে রূপগঞ্জে মাদকের জাল বিস্তার লাভ করছে খুব দ্রুত। এ উপজেলার ১২৮ টি গ্রামের মধ্যে একশ’২৮টি গ্রামেই মাদক ব্যবসা চলছে। পুলিশ, এলাকাবাসী ও মাদকসেবীদের দেওয়া তথ্য ও এলাকায় অনুসন্ধানে জানা যায়, এখানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন নয়ামাটি এলাকার মৃত হবুল্লার ছেলে কবির হোসেন, নগরপাড়া এলাকার মৃত তাফাজউদ্দিনের ছেলে মিতু মিয়া, রাতালদিয়া এলাকার রহমান আলীর স্ত্রী ছলে বেগম, সাওঘাট এলাকার মৃত উকিল উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন রঞ্জু, দরিকান্দি এলাকার পোশানির ছেলে মজিবুর রহমান, মাছিমপুর এলাকার আঃ সালামের ছেলে জসিম, আঃ মজিদের ছেলে পরদেশী শফিক, রূপগঞ্জ থানার পাশের নিলু ফকিরের ছেলে জুয়েল, রূপসী শুইচগেট এলাকার চান্দু ফকিরের ছেলে জামাল-কামাল, কাঞ্চন পনস্-গার্ডেনের পাশে শরিফ, নলপাথর এলাকার শুভাস, মাছিমপুর এলাকার আকছারউদ্দিনের ছেলে তাওলাদ, চনপাড়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে ফেন্সি ফারুক, খোয়াজ বক্স হাওলাদারের ছেলে শাহ আলম, কালাদি এলাকার সোলায়মান মিয়ার ছেলে আমানউল্লাহ, সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আলতাফ হোসেন, আতলাশপুর এলাকার ফারুক মোল্লার ছেলে নিশাত মোল্লা, হাটাবো টেকপাড়া এলাকার আঃ হেকিমের ছেলে মিলন, তারাব হাটিপাড়া এলাকার ফিরোজ মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান, আক্কাস আলীর ছেলে সোহেল মিয়া, মধুখালী এলাকার ছাদেক মিয়ার ছেলে আবুল কসাই, গোয়ালপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে শফিকুল, ছনি এলাকার আমির হোসেনের ছেলে শামীম, গর্ন্ধবপুর এলাকার ফারুক মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম, আব্দুল হকের ছেলে আব্দুল সামাদ মিয়া, কাজেম মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়া, ছফুল উদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া, কামশাইর এলাকার হাবিবুল্লার ছেলে মিন্টু মোল্লা, দক্ষিণ মাসাবো এলাকায় মহসিন, বরপা এলাকায় রুহুল সিকদারের পুত্র সাইফুদ্দিন, তোবারকের ছেলে নাহিদ ও তানভীর, লতিফের ছেলে অহিদ, সহিদ, মিজানের ছেলে শাহিন, গোলাকান্দাইল এলাকার বাবুল, মৃত রমজান মোল্লার ছেলে সবুজ মোল্লা, জনুর ছেলে রুলামিন, শাকয়াত, রিপনসহ আরো অনেকে। এরা সবাই মাদকের ডিলার। কেউ ইয়াবা, কেউ ফেন্সিডিল, কেউ হেরোইন আবার কেউ গাজার পাইকারী ব্যবসায়ী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জে সড়ক ও নৌপথে অবাধে মাদকদ্রব্য আসে বলে জানায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা। মাদক প্রবেশের সবচেয়ে নিরাপদ রুট হচ্ছে বালু নদ। এ নদে পুলিশ টহলের ব্যবস্থা না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ইঞ্চিনচালিত ট্রলারযোগে মাদক আনা-নেওয়া করে।

এছাড়া শীতলক্ষ্যা নদ দিয়েও মাদকদ্রব্য রূপগঞ্জে ঢুকে। এ নদ দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজে করে মাদক ঢুকে রূপগঞ্জে। এদিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে কুমিল্লা থেকে মাদক ঢোকে রূপগঞ্জে। আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মবাড়িয়া থেকেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে মাদক ঢোকে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূলতা-গোলাকান্দাইল হচ্ছে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট। আখাউড়া, সিলেট ও ব্রাহ্মবাড়িয়া থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইন বাস, নাইট কোচ, এম্বুলেস, মোটরসাইকেলের বহরে কিংবা ট্রাকে করে এলাকায় আসে।

এব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোঃ মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মাদক নিয়ে রীতিমতো অভিযান চলে। রূপগঞ্জে অনেক এলাকা দুর্গম । এসব এলাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। এ সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত