ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

পদ্মা-যমুনার তীরে বাদামের বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

  পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০১৯, ১৩:২২

পদ্মা-যমুনার তীরে বাদামের বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

পাবনার বেড়া ও সুজানগর উপজেলায় পদ্মা-যমুনার তীর অঞ্চলে এবছর বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাদাম ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ভাল ফলন ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভাল দাম পেয়ে তারা বেশ খুশি।

কৃষি অফিস সুত্রে জানায়, এবছর সুজানগর উপজেলায় পদ্মা পাড়ে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে বাদাম রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল কিন্তু কৃষকেরা এর চেয়েও বেশি জমিতে বাদামের আবাদ করে। আর বেড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে যমুনার বুকে ১১ শ’৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার আবওহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা পাবনাসহ সারাদেশে বিক্রি হবে।

বেড়ার যমুনা পাড়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীতে বান না ডাকলেও ভরা ফসলের মাঠে কৃষকের হাঁসির বান ডেকেছে। এ সময়ের ফসল বলতে বাদাম। চর কোলচিনাখরা, চর মধুপুর, চর গনপদ্দিয়া, চর দেউনাই, চর পুকুরপাড়, চর সিংহাসন, চর বোরামারা, চর শাফুল্লা, চর যদুপুর, চর লক্ষীপুর প্রভৃতি চরে হাজার বিঘা জমিতে হয়েছে বাদামের চাষ। চরের পর চর বাদামের ক্ষেত। তাকালে মনে হয় যেন আদিগন্ত বাদামেরই জগৎ।

চাষিরা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বেড়ায় ঢালারচর ইউনিয়নে বাদামের চাষ করা হয় সবচেয়ে বেশি। তাছাড়াও হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চরগুলোতে ব্যাপক হারে বাদাম চাষ হয়ে থাকে।

নগরবাড়ী এলাকার বাদাম চাষী শের আলী মিয়া, আবু সুফিয়ান, শাহীন, মোক্তার হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, এ অঞ্চলে সাধারণত ডিজি-১ ও ডিজি-২ জাতের বাদাম চাষ করা হয়। এবার বাদামের ফলনও হয়েছে খুব ভাল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষাবাদ হয়ে থাকে ভায়না, সাতবাড়িয়া, মানিকহাট, নাজিরগঞ্জ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নে। এসব চরাঞ্চলের জমিতে ধান-পাট ও অন্য ফসল তেমন ভাল হয় না, এ কারণে কৃষকরা বেশিরভাগ সময় এ সকল জমিতে ধান-পাট আবাদ করে লোকসানে পড়েন। এ জন্য তারা লোকসান থেকে বাঁচতে এ বছর উপজেলা কৃষি বিভাগের পরার্মশে সকল ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জমিতে চিনাবাদম আবাদ করেছেন।

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর জমিতে বাদামের খুব ভাল ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছর যেখানে এক বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ বাদাম পেতাম কিন্তু এ বছর ৯ থেকে ১০ মণ বাদাম আমরা ঘরে তুলতে পারছি।

উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বুলচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মওলা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এবছর জমিতে বাদাম ভাল হয়েছে। এখন দুই হাজার টাকা মণ দরে বাদাম বিক্রি করা যাবে। এতে বাদাম উৎপাদন করতে যে টাকা ব্যয় হয় সে টাকা বাদেও ভাল লাভ হবে।

উপজেলার ভায়না গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে চিনাবাদাম আবাদ করতে সার, বীজ ও শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, বর্তমান বাজারে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত চিনাবাদামের মূল্য প্রায় ২৫/২৬ হাজার টাকা যা, উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকার বেশি। ফলে চিনাবাদাম চাষীরা ভীষণ খুশি।

সুজানগরের সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কৃষকেরা মাঠ থেকে বাদাম গাছ তুলে বাড়ি এনে সেই গাছ থেকে বাদাম আলাদা করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এছাড়া দিনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় ছোট- বড় নারী শ্রমিকদের দিয়ে গাছ থেকে বাদাম আলাদা করার কাজ করাচ্ছেন অনেক কৃষক।

বেড়ার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে বাদাম তোলার কাজ শুরু হয়ে গেছে। জমি থেকে বাদাম গাছসহ সংগ্রহ করে খোলা জায়গায় এনে জড়ো করা হচ্ছে। তারপর স্থানীয় মহিলারা গাছ থেকে বাদাম আলাদা করছে।

সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের রাইপুর এলাকার কৃষক মোঃ গফুর হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সরকার অন্যান্য ফসলের বীজ বিভিন্ন কৃষকদের মাঝে প্রদান করলেও আমাদের কখনও বাদামের বীজ প্রদান করা হয় না। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি আগামী বছর যেন আমাদের মাঝে বাদামের বীজ প্রদান করা হয়। এতে আমরা আরও লাভবান হতে পারব।

সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এবছর অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদামের ফলনটা খুব ভাল হয়েছে। আর আমি আশা করব আগামীতে আরো কিভাবে ভাল ফলন কৃষকেরা পেতে পারে সে বিষয়ে তাদের বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা প্রদান করবে উপজেলা কৃষি অফিস।

সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার ময়নুল হক সরকার বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, কোন কোন এলাকায় চাষিরা বাদামের সাথে ‘সাথী ফসল’চাষ করেছেন। বাদাম ক্ষেতে বুনে দেয়া হয়েছে ধান, তিল, কাউন। কাউন ও তিল আগে উঠে যায়। বিঘা প্রতি এক থেকে দুই মণ তিল ও দুই মণ কাউন পাওয়া যায়। এরপর পাওয়া যায় বাদাম।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজাহার আলী বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, বেড়া-সুজানগরে পদ্মা-যমুনায় এবছর বাদাম উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ আবহাওয়া অনুকুলে ছিল এবং উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে চাষিদের পরামর্শমূলক বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছিল। আর আগামীতে সরকার চাষিদের বাদামের বীজ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিলে তা চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হবে ।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিপিবি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত