উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯ বছর পর দোহার পৌরসভা নির্বাচন
দোহার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫৮
জয়পাড়া, রাইপাড়া, সুতারপাড়া ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের আংশিক নিয়ে ২০০০ সালে গঠিত হয় দোহার পৌরসভা। ভোটার তালিকা ও সীমানা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৯ বছর আটকে থাকা রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী দোহার পৌরসভার নির্বাচন আগামী ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর গঠিত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। পৌরসভা নিয়ে দায়েরকৃত মামলার বাদিরা তাদের মামলা তুলে নেয়ায় উচ্চ আদালত এ আদেশ দেন।
দোহার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, অন্য কোন জটিলতা না থাকলে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দোহার পৌর নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর, সীমানা জটিলতা, কতিপয় দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধি এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদে লিপ্ত কতিপয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ১৯ বছর ঢাকার দোহার পৌর নাগরিকগণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীরা বলেন, আমাদের দোহার-নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সার্বিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, দোহার পৌর এলাকার ভোটাররা তাদের দীর্ঘদিনের হারানো ভোটাধিকার ফিরে পাচ্ছেন। যা অনেক আনন্দের বিষয়। দোহার উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এ নির্বাচন একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে তারা মনে করেন।
পৌরবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে কতিপয় জনবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধিরা তাদের দুর্নীতিকে আড়াল করতে বিভিন্ন উপায়ে ১৯ বছর নির্বাচন হতে দেননি। ফলে পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন পৌরবাসী।
২০১৩ সালে দোহার পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের ৩ দিন পূর্বে চরলটাখোলা গ্রামের মৃত আবদুল হালিমের ছেলে আবদুস সোবাহান ও কাঁঠালিঘাটা গ্রামের মৃত ফায়জদ্দিন বেপারীর ছেলে মজিবর রহমান পৌর এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। মুঠোফোনে আবদুস সোবাহানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দোহার পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে তিনি মামলা তুলে নিয়েছেন।
দক্ষিণ জয়পাড়া এলাকার মাঝিপাড়া গ্রামের অধিবাসী আবু বক্কর বলেন, প্রায় ১৯ বছর নির্বাচন হয় না। ফলে মেয়রসহ কাউন্সিলরদের মধ্যে এখন আর সেবার মনোভাব নেই। নির্ধারিত কর পরিশোধ করলেও দোহার পৌরসভা এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন বা অগ্রগতি দেখা যায় না অনেক বছর। ময়লা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। ফলে চলমান বর্ষা মৌসুমে জয়পাড়া পৌর এলাকায় মশার ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া পৌর নাগরিক কৃষক শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, নামেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কগুলোতে পানি জমে থাকছে। কাদা ও পানি জমে থাকায় স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশ ৩ মাসের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছর পর নির্বাচন হবে এটা শুনে ভালোই লাগছে।
তিনি নির্বাচনের দিন ভয় ও শঙ্কাবিহীন ভোট প্রয়োগের দাবি জানান। যাতে অযোগ্য লোক নয় বরং যোগ্য লোক পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ এলাকার উন্নয়ন করতে পারে। দোহার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর জামিলা খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন জনসেবা করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি আবার প্রার্থী হবেন বলে জানান।
পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবদুর রহিম মিয়া বলেন, পৌর এলাকার সীমানা নিয়ে আমার জানামতে ৪টি মামলা হয়। যথাসময়ে নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, বয়স হয়েছে। এখন আর ভালো লাগে না। প্রতি অর্থবছরে লোক দেখানো কোটি কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি দেখানো হয়- এ বিষয়ে বলেন, জনগণ পৌরসভার সঙ্গে থাকতে চায় না। তারা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে না। আমি তাহলে কিভাবে উন্নয়ন করব। কিভাবে পৌরসভা চালাব।
দোহার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশের কপি ৫ আগস্ট হাতে পেয়েছি। নির্দেশ হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে