ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

নগদ টাকা থেকে মাছ-মাংস, সবই নেন মাউশি উপ-পরিচালক

  খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৮  
আপডেট :
 ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৫:২১

নগদ থেকে মাছ-মাংস সবই নেন মাউশি উপ-পরিচালক
ছবি সংগৃহিত

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) খুলনার উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠকের অনিয়ম, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, অফিস ফাইল বাণিজ্য ও হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

আর এই অভিযোগের তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর তদন্তভার দেয়া হয়েছে অন্য কলেজের শিক্ষকদের। তবে সেই তদন্তে অসহযোগীতার অভিযোগ উঠেছে নিভা রানী পাঠক এর বিরুদ্ধে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, উপ-পরিচালককে তদন্তে সহযোগীতা করার জন্য বারবার চিঠি পাঠালেও তা কার্যকর হচ্ছে না। যদি চলতি সপ্তাহে কোনো ধরনের জবাব না পাওয়া যায় তাহলে সরাসরি উপ-পরিচালক কার্যালয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা চিন্তা করছেন তারা।

অভিযোগ অনুযায়ী জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক এর আওতাধীন খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের শুরু থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আদায় করেন। জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের নিকট থেকে তার অফিসের দুইজন সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তা হেদায়েত হোসেন ও মশিউর রহমান এবং কর্মচারী সংযুক্তিতে মনিরুজ্জামান মনিরের মাধ্যমে এসব অর্থ আদায় করতেন।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম না দিলে শিক্ষকদের এমপিও হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিধি বহির্ভূত বিষয়ভিত্তিক শাখা ও সমন্বয় প্রভাষকদের কাছ থেকে কর্মচারী মনিরের মাধ্যমে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে এমপিওভুক্ত করে দেন তিনি।

খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানার রায়ের মহল কলেজের একজন প্রভাষক ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা অঞ্চলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জেলা শিক্ষা অফিসের শিক্ষক ও কর্মচারী বদলির জন্য ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন উপ-পরিচালক নিভা রানী পাঠক। অর্থের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাছ, মাংস ও অন্যান্য জিনিসপত্র উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।

এছাড়াও উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। যার অধিকাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই দপ্তরের অফিস সহকারি মো. আলীম উদ্দিন মোড়ল ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম এর অবৈধ সম্পদ ও অন্যান্য বিষয়েও অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগ আমলে নিয়ে ৯ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগসমূহ সরেজমিন তদন্তপূর্বক সাত কর্মদিবসের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মুস্তাহিদুল আলম ও একই কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজীকে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে মাউশি খুলনার উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দুদক কাজ করছে। কিছু জানতে চাইলে দুদকের সাথে কথা বলতে হবে। তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না।’

তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রফেসর শেখ মুস্তাহিদুল আলম বলেন, ‘তদন্তের জন্য ২৮ জুলাই উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠককে স্বশরীরে এসে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। তিনি ওই দিন এসেছিলেন কিন্তু কোনো ধরনের লিখিত জবাব না দিয়ে তিন কর্মদিবস সময় আবেদন করেন। সে সময়ও শেষ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তিন-চার দিন আগে পুনরায় চিঠি প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য ওই কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এ সপ্তাহটা দেখে প্রয়োজনে সরাসরি অফিসে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত