ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই রিজার্ভ কমেছে ১.৬২ বিলিয়ন ডলার

  অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:১১  
আপডেট :
 ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:১৭

সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই রিজার্ভ কমেছে ১.৬২ বিলিয়ন ডলার
রিজার্ভ

চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। মাসের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে (বিপিএম৬) রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০ সেপ্টেম্বর তা ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে জুলাই-আগস্ট মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ব্যয় পরিশোধে ১৩১ কোটি ডলার দিতে হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে এসেছে। আবার রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার বিক্রিও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব কারণে সেপ্টেম্বরে রিজার্ভের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমে যাচ্ছে। মাস শেষে রিজার্ভ ক্ষয়ের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবেই তা করা হচ্ছে। আইএমএফ থেকে শর্ত রয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ থাকতে হবে ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা ২৬ দশমিক ৮০ বিলিয়নে উন্নীত করার শর্তও দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে অবশ্য ২০ সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছিল। সে হিসাবে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের ক্ষয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ মন্থর। সর্বশেষ গত মাসে (আগস্ট) প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পতন হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে এসেছে কেবল ৭৩ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার কারণেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে; তাও আবার জ্বালানি তেল, এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায় মেটানোর জন্য। পাশাপাশি সরকারের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। আর চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের গ্রস রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তারপর থেকেই রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

ডলারের বাজারে অস্থিরতা

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংকে চাহিদার তুলনায় ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে বেশি দামে ডলার কিনে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকের কাছে বিক্রি করছে।

রফতানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রের ডলারের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানিকারকদের কাছে এখন ১১০ টাকায় ডলার বিক্রি করছে ব্যাংকগুলো। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংক প্রতি ডলারে ১১৪-১১৫ টাকা দাম নিচ্ছে। কারণ, প্রবাসী ও রফতানি আয় কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। না হলে ঋণপত্র খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

এই ঘটনায় বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে এসব ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানকে জরিমানা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকগুলো যাতে ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে, সে জন্য ব্যাংক মালিকদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জবাবে ব্যাংক-মালিকরা বলেছেন, ডলারের দাম কিছুটা বাড়ানো হলে তাতে সংকট কমতে পারে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: শাস্তির মুখে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত