শাবির তৃতীয় সমাবর্তন, বর্ণিল সাজে ক্যাম্পাস
সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ০১:১০
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বহুল প্রতিক্ষীত তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সমাবর্তনকে সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারিবৃন্দ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনভর বিভিন্ন পর্যায়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে।
দীর্ঘ এক যুগ পর সমাবর্তন হওয়ায় উৎসব মুখোর হয়ে ওঠেছে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশাল উৎসবের আমেজ। সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে নতুন মোড়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সমাবর্তনস্থল পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে লাগানো হয়েছে রং-বেরং এর পতাকা। করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। গোলচত্বরকে নতুনভাবে মেরামত করা হয়েছে এবং ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন ভবনের সামনে এবং উপরে টানানো হয়েছে সমাবর্তনের ব্যানার-ফেস্টুন। ভবনগুলোতে নতুন করে রং করা হয়েছে।
এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল প্যান্ডেল ও স্ট্যাজের কাজ শেষ। ইতোমধ্যে কস্টিউম, গিফট ও আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখোর পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খোসগল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের। নতুন গাউন ও হ্যাট পরিধান করে ছবি তুলে অনেকে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অনেকে আবার তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে নতুন-পুরাতনের মিলনমেলায়।
এদিকে সমাবর্তন বুধবার হলেও সোমবার ও মঙ্গলবার কস্টিউম বিতরণের পর থেকেই ক্যাম্পাসে উৎসব শুরু হয়েছে। কালো গাউন ও হ্যাট পরে দিনভর দলবদ্ধ ও এককভাবে ছবি তুলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সাবেক শিক্ষার্থীদেরকে পেয়ে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে। সকাল থেকেই সাবেকদের সাথে গল্পে-আড্ডায় সময় পার করছেন তারা।
১৯৯১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দীর্ঘ ২৮ বছরে শাবিতে মাত্র দু’টি সমাবর্তন আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল প্রথম সমাবর্তন এবং এর ৯ বছর পর ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক উপাচার্যবৃন্দ অনেকবার চেষ্টা করলেও তা বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন। তৃতীয় সমাবর্তনে মোট ৬ হাজার ৭৫০ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে স্নাতকের ৪ হাজার ৬১৭ জন এবং স্নাতকোত্তরের ১ হাজার ১২৭ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া পিএইচডি ২ জন, এমবিবিএস ৮৭৮ জন, এমএস ও এমডি ৬ জন এবং নার্সিংয়ের ১২০ জন শিক্ষার্থী।
এদিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১০ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও ৫ জনকে স্নাতকোত্তর ফলাফলের জন্য এবং দ্বিতীয় সমাবর্তনে বাদ থাকা ৫ জনকেও স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষদে প্রথম হওয়া ৮৯ শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হবে ‘ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি একদম শেষ পর্যায়ে। সবকিছু সুন্দরভাবেই আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি কখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসবেন এবং শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকে দিতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, চতুর্থ সমাবর্তন চলতি বছরের শেষের দিকে বিশেষ করে ডিসেম্বরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এরপর প্রতিবছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ জার্নাল/আর
