ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবিতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে ছাত্রলীগের বাধা

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ২০:১৯

ঢাবিতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে ছাত্রলীগের বাধা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগের নারী নেত্রী ও কর্মীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সামনে ও মিশুক মনির চত্ত্বর সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

অবৈধ দোকানকে কেন্দ্র করে মেয়েদের এই হলটির ফটকে বহিরাগতদের আড্ডার বসে- এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে হল সংসদের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এতে উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা বলছেন, ‌‘দোকান সরিয়ে ফেললে শিক্ষার্থীরা খাবে কী?’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, হলের সামনে বসা দোকানগুলো থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেন ছাত্রলীগের নেতারা। দোকান উঠিয়ে দিলে তাদের অবৈধ আয় বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে তারা অনুসারী ও কর্মীদের দিয়ে দোকান উচ্ছেদে বাধা দিয়েছেন। দোকান সরিয়ে ফেললেও ছাত্রীদের কোন অসুবিধা হবে না। কারণ প্রতিটি হলের ভেতরেই দোকান আছে।

এসময় উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেওয়া হল সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) আফসানা ছাফা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দোকানগুলো এখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছে। এসব দোকানের কারণে এখানে বিকেল বেলায় বাজারে পরিণত হয়। বহিরাগত, মাদকসেবী, ভবঘুরে লোকজন আড্ডা দেয়। যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাই আমরা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে এসেছি। স্টেট ম্যানেজার এবং হল প্রাধ্যক্ষও এসব অবৈধ বলে নোটিশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা পেয়ে আমরা এখানে এসেছি।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের সময় দলবল নিয়ে এসে বাধা দেন ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের পাঠকক্ষ বিষয়ক সম্পাদক বিশাখা দাস ইরা। সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার নাম-পরিচয় ও বাধার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিজের পরিচয় বলেননি। সে সময় তিনি বলেন, আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি। নাম বলার প্রয়োজন মনে করছি না।

উচ্ছেদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি থাকার পরও আপনারা কেন বাধা দিচ্ছেন? এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দোকান উঠে গেলে আমরা নাস্তা করবো কোথায়? হলের ভেতর বাড়তি দোকান দেওয়া ছাড়া এটা উচ্ছেদ হতে পারে না।

অভিযানে বাধা দেওয়ার সময় বিশাখা দাস ইরার সঙ্গে আরেক ছাত্রলীগ নেত্রী সেহেরজানসহ প্রায় ২০ জন অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। ইরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, হলের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা যেটি চায়, তাদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী, তাদের সমস্যার আলোকে এটি সমাধান হওয়া উচিৎ। আমি প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে একটি যৌক্তিক সমাধান করা চেষ্টা করব।

দোকানগুলো কার দায়িত্বে- এ নিয়ে ঠেলাঠেলি ও পরস্পর বিপরীত মন্তব্য করেছেন হল প্রভোস্ট ও এস্টেট ম্যানেজার। দায়িত্ব নিয়ে দ্বিমত থাকলেও অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে তারা উভয়েই অভিন্ন মত জানিয়েছেন।

শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয় সাহা বলেন, এ ব্যাপারে হল সংসদের আগ থেকেই দাবি ছিল। আমি দু’বছর যাবৎ বিভিন্নভাবে এসব উচ্ছেদ করার জন্য চিঠি দিয়ে আসছি। দোকানগুলো থাকার কারণে এখানে বহিরাগত গাড়ি পার্কিং শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এগুলো উচ্ছেদে আমার সম্মতি রয়েছে। তবে যে জায়গায় দোকানগুলো বসানো হয়ে তা এস্টেট ম্যানেজারের দায়িত্বে। আমার দায়িত্বে হলে আমি সরাতাম।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত এস্টেট ম্যানেজার মিসেস সুপ্রিয়া দাস বলেন, এটা হল প্রশাসনের দায়িত্ব। আমরা চিঠি দিয়ে তাদের অবহিত করেছি। এস্টেট ম্যানেজারের পাঠানো চিঠিতে দেখা যায়, হল প্রাধ্যক্ষেরও অনুমতি রয়েছে দোকানগুলো উচ্ছেদের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, গতকালই ওই দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি। এট এস্টেট অফিস করবে। প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ সাথে থাকবেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত