ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

যারা আসবে না তাদের ছাড়াই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার ভাবনা

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৫৪  
আপডেট :
 ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৭

যারা আসবে না তাদের ছাড়াই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার ভাবনা

বুধবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) না করার পরে বৃহস্পতিবার একই সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় দুটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় না গিয়ে বরং প্রথম বছর দেখতে চায়। এমতাবস্থায় ১৯৭৩ সালের আদেশে চলা বাকি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ও মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে আয়োজিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় না আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ প্রথম থেকেই একই ধরনের কথা বলে আসছিলো এ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়।

বুয়েট ও চবি ছাড়া তালিকার অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যদিকে কয়েকবার আলোচনার পর ইউজিসি বলছে, যারা আসবে না তাদের ছাড়াই বাকিদের নিয়ে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকেই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কেউ আসতে চাইলে আসতে পারবে।

যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জানান, তারা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন, বুয়েট হয়তো কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় আসবে না। এছাড়া আলোচনায় থাকা অপর চার বিশ্ববিদ্যালয়ও আলোচনায় না আসতে পারে। আর তাই এর আগে আলোচনা করা হয়েছিলো যারা আসবে না তাদের ছাড়াই অন্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।

আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান আফরোজা বেগম।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই সমমনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো মনে করছেন। গত বছর কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশের মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষাও একইসাথে হয়।

সূত্র মতে, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার বিষয়গুলোর জন্য তিনটি পৃথক পরীক্ষা হবে। এই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি নম্বর (স্কোর) দেয়া হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্ত অনুযায়ী আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে। এর ভিত্তিতে নতুন করে আর ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত স্কোরকে বিবেচনা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

দেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলোতে প্রথম বর্ষে প্রায় ৬০ হাজারের মতো আসন রয়েছে। এর বিপরীতে পরীক্ষা দেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় কমাতে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি।

কিন্তু কিছুদিন আগে অনেকটা আকস্মিকভাবে গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত পরীক্ষার পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এ নিয়ে বিতর্ক ও দ্বিমত দেখা দেয়।

সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেদিন সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুস সোবহান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ গিয়াসউদ্দীন মিয়া, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন আহম্মদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সেদিন বৈঠক শেষে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো, আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। একই ধরনের কথা বলেছিলেন চবি, জাবি ও বুয়েটের ভিসি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেছিলেন, আমরা স্বায়ত্তশাসিত বলে আমাদের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেব। মানের একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। সেটা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা হলেও ভর্তির যোগ্যতার সর্বনিম্ন স্কোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই নির্ধারণ করবে। ফলে ১০০ নাম্বরের মধ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সর্বনিম্ন স্কোর ৪০ আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন স্কোর আবার ৭০ হতে পারে।

একইদিন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ইতিবাচক পরিবেশে খোলা আলোচনা হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। আপত্তিও করেননি বরং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী এ বিষয়ে একটি উপস্থাপনা করেছেন। সেটি অত্যন্ত সুন্দর।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী সবার অংশগ্রহণে এ বছরই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে। আর যদি দু-একটি নাও আসে তাহলে আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। কেননা- ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এ কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে। এটাই যুগের চাহিদা। কেউ পিছিয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি না।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত