ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনা আতঙ্কের মধ্যেও প্রাথমিকে বিরাট সুখবর

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২০, ২১:০৫

করোনা আতঙ্কের মধ্যেও প্রাথমিকে বিরাট সুখবর

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে আরও ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে দুজন চিকিৎসক। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বভাবতই সারাদেশের মানুষ তটস্থ। তবে করোনা আতঙ্কের মধ্যেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে বিরাট সুখবর।

দেশের সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়বিহীন ১ হাজার গ্রামে আরও ১ হাজার প্রাথমিক স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে তার এলাকার কোন কোন গ্রামে প্রাথমিক স্কুল নেই তার তালিকা দিতে বলা হয়েছে। তারপর এ সংক্রান্ত ডিটেইল প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প (পিইডিপি-৪) আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী বিদ্যালয়বিহীন প্রত্যেকটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। সে লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপে এক হাজার গ্রামকে বাচাই করতে ইউএনওর নেতৃত্বে একটি করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়া পর পুরোদমে কাজ শুরু করব। পরবর্তীতে আরও বিদ্যালয়বিহীন গ্রাম থাকলেও সেখানে বিদ্যালয় করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকারে জিআইএসের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়বিহীন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে উপজেলাভিত্তিক ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তুত করার ম্যাপে বিদ্যালয় স্থাপনের কিছু জায়গা প্রাথমিকভাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে। এলজিইডি প্রস্তুতকৃত উপজেলাভিত্তিক ম্যাপে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত স্থাপনাসমূহ সরেজমিন পরিদর্শন করে বাস্তব অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে কমিটিকে বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে, সদস্যসচিব করা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কমিটি অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড), উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও সহকারী প্রকৌশলী (ডিপিএইচই)।

কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যালয়বিহীন এলাকা চিহ্নিত করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারি প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় স্থাপনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, এলজিইডি প্রস্তুত করার ম্যাপে চিহ্নিত এলাকার বাইরে যদি কোনো এলাকার বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সরজমিনে প্রতীয়মান হয় সেক্ষেত্রে সেসব এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাবে কমিটি।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (উন্নয়ন) নুরুন্নবী বলেন, অনেক দিন আগেই এসব বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন জরুরি ভিত্তিতে এ বিদ্যালয় স্থাপন করতে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে যদি এক হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের চাহিদা পাওয়া যায় তবে সেগুলো স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখার তথ্যমতে, বিদ্যালয়বিহীন ১৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনা প্রকল্প গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেসে আরও এক হাজার বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে স্কুল নির্মাণের জন্য ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তার আগে ইউএনওর নেতৃত্বে কমিটির প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত সময়ে প্রকল্পটি অনুমোদন হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। কেননা দেশের সব বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে স্কুল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের প্রায় ২১শ গ্রামে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। পাহাড়, হাওড়, চর ও উপকূলীয় এলাকায় এর সংখ্যা বেশি। চার থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো স্কুল নেই। যে কারণে এসব দুর্গম এলাকার শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে জন্য বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে প্রাথমিক স্কুল নির্মাণের নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালের জুন মাসে ‘বিদ্যালয়বিহীন ১৫০০ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৯০৫ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিপিইর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় সব স্কুল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে নির্মিত স্কুলে প্রেষণে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অনেক স্কুল চালু করা হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থীরা। তবে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার কারণে পাঁচটি স্কুলের নির্মাণকাজ আটকে আছে।

দেশের প্রাথমিক স্কুলের চিত্র তুলে ধরতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর উদ্যোগে ২০০৮ সালে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলায় ১ হাজার ১৭৩টি গ্রামে, মানিকগঞ্জে ৫৪৮, টাঙ্গাইলে ৫২৮, দিনাজপুরে ৩৩৬, রংপুরে ২৩৭, জয়পুরহাটে ৩২৬, সিরাজগঞ্জে ৩৫৬, পাবনায় ৩৬৮, সাতক্ষীরায় ৩৩৫ ও নেত্রকোনা জেলায় ৮৭৯টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাকি জেলার প্রায় একই চিত্র। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী দেশের ১৬ হাজার ১৪২টি গ্রামে সরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওই সমীক্ষা ধরেই পরবর্তিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরে রেজিস্টার্ড স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। আর বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে নতুন বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে আর প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনা করা হবে বলে ২০১৩ সালের ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন। এসব কারণে নতুন আরও ১ হাজার বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় দুটি মানদণ্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, যেসব গ্রামে দুই হাজারের বেশি জনসংখ্যা এবং গ্রামের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। সেসব গ্রামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। স্কুল নির্মাণের স্থান নির্বাচনে বন্যায় নদীভাঙন এলাকা বর্জন ও শিশুদের যাতায়াত সুবিধা বিবেচনা করা হয়েছে। বন্যার সময় যাতে স্কুল পানিতে তলিয়ে না যায় বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত