ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অনীহা অনলাইন ক্লাসে

  বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২০, ১৬:৪০

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অনীহা অনলাইন ক্লাসে
ফাইল ছবি

বরিশাল নগরীসহ ১০ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টেলিভিশনে ক্লাসের প্রতি মোটেই আগ্রহ নেই। এরপরও শহরের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কিছুটা চাপ প্রয়োগ করে টেলিভিশনের ক্লাস করতে বাধ্য করলেও গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কোন ক্লাসই করে না। এদিকে করোনা দুর্যোগের তিনমাস অতিবাহিত হলেও বরিশালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারেনি শিক্ষা কর্মকর্তারা।

নগরীর একাধিক অভিভাবকরা জানান, করোনার কিছুদিন পর থেকেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে ক্লাস নেয়া শুরু হয়। প্রথম দিকে শিশুদের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও তা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করে টেলিভিশনের সামনে বসানো হলেও তা স্থায়ী হতো না। বিশেষ করে যা বুঝতো না সে বিষয়ে প্রশ্ন করার কোন সুযোগ না থাকায় তাদের আগ্রহ নেই। তবে অনলাইনে ক্লাস নিলে এ সমস্যাটা থাকতো না।

তারা আরো জানান, আসলে পড়াশুনার চেয়েও এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে সন্তানদের বাসায় ঘরে ধরে রাখা। এ জন্য তাদের উপর যে চাপ দেবো তাতে করে তারা যেন বাহিরে না যায় সে বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। আগে হচ্ছে আমাদের সন্তান বেঁচে থাকুক ভালোভাবে। পড়াশুনার সময় পাওয়া যাবে কিন্তু সন্তানের কোন সমস্যা হলে সেটা আমরা কিভাবে সামাল দেবো।

গ্রামের এক অভিভাবক বলেন, টেলিভিশনে ক্লাস শুরুর পর সন্তানকে বসিয়ে দিয়ে আমরা সরে গেলে সে ওই চ্যানেল পাল্টে বিনোদনমূলক চ্যানেল দেখে। এরপরও আমরা বুঝিয়ে তাদেরকে টেলিভিশনে ক্লাস করতে আগ্রহ সৃষ্টি করাতে পারিনি। আসলে আমাদের সন্তানরা এভাবে ক্লাসে কোন আগ্রহ নেই।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, প্রাইমারীর শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য অভিভাবকদের প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ শিশুরা টেলিভিশন কিংবা অনলাইনে ক্লাসে অভ্যস্ত না। এ জন্য অভিভাবকরা নির্ধারিত সময় শিশুদের নিয়ে টেলিভিশনের সামনে ক্লাসে অংশ নেবেন। এক্ষেত্রে তার সন্তান যা বুঝতে পারছে না সে বিষয়ে তাকে সাহায্য করবে। এতে করে ক্লাসে যেভাবে পড়া চলতো তা না হলেও শিশু শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক ক্লাসে কিছুটা হলেও পারদর্শী হবে।

বরিশাল সহকারি শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম জাফর বলেন, করোনার দুর্যোগকালীন সময় প্রধান কাজ হচ্ছে প্রাইমারীর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মধ্যে ধরে রাখা। যা সরকার প্রথম থেকেই করে আসছে। আমার জানা মতে শিক্ষার্থীরা রুটিন সংগ্রহ করে সময়মত টেলিভিশন দেখে শিক্ষা নিচ্ছে। তবে এতে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছে না এজন্য কী করণীয় রয়েছে সরকারের। এ প্রশ্নের জবাবে জাফর বলেন, সরকারি প্রাইমারী শিক্ষার্থীর প্রতিটি অভিভাবকের কাছে উপবৃত্তির জন্য সরকার থেকে টেলিটক সিম দেয়া আছে। সেক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও অনলাইন ক্লাস নেয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, এখন প্রতিটি ঘরে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন রয়েছে। জিবি সুবিধা দেয়া হলে অনলাইন ক্লাসে প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ফোরামের বরিশাল মহানগরের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় পর্যায় থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন ধরনের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়নি। তবে টিভির মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এমনকি কোন দিন কোন ক্লাস তা রুটিনও দেয়া হয়েছে। সেভাবে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার মধ্যে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেটের লাইন সব ঘরে না থাকলেও প্রতিটি ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। আসলে এটা একটা সাময়িক ব্যাপার। আমরা আশা করছি সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আমাদের এ সমস্যা আর থাকবে না।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরিশাল বিভাগীয় দপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম ফারুক বলেন, করোনা শুরুর পর থেকেই টিভির মাধ্যমে ক্লাস চলছে। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা চালাচ্ছে। তবে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস শুরু করা যায়নি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করানোরও চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত