শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ, ৪ শিক্ষককে শোকজ
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২০, ২০:২৮
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে শোকজ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ অক্টোবর এই শোকজ করা হয় এবং তিন দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার কথা বলা।
শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ হলেন- বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী, বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম ও ইংরেজি ডিসিপ্লিনের প্রভাষক আয়েশা রহমান আশা।
চলতি বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত শোকজপত্রে বলা হয়েছে, গত ২ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ভীতিকর পরিস্থতি তৈরি করে। ঘটনাটি বেআইনি, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত।
চিঠিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সরাসরি বলা হয়েছে, 'উক্ত বিষয়ের সাথে আপনার সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে প্রতীয়মান হয়েছে।'
সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের প্রায় ২ মাস আগে ১৩ নভেম্বর আবাসন সঙ্কটের তীব্রতা, ন্যূনতম মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। কিন্তু প্রশাসন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকলে ১ জানুয়ারি ছাত্ররা আন্দোলনে নামে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সহমত পোষণকারী শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান ও শিক্ষক ইমরান কামাল বলেন, আমরা গিয়েছি, সহমত পোষণ করেছি, চলে এসেছি। শিক্ষার্থীদের দাবি সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের ছিলো, ফলে আমরা সেখানে সমর্থন প্রদান করেছি। সেজন্য আমাদের মধ্য থেকে মাত্র চারজন শিক্ষককে এই পত্র প্রেরণ করাটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অচিরেই এই পদক্ষেপ থেকে সরে আসবে, আমাদের চারজন সহকর্মীর কাছ থেকে হয়রানিমূলক এই পত্র অবিলম্বে প্রত্যাহার করবে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি ছাত্র-আন্দোলন বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে ১১-২-২০২০ তারিখে। তারপর থেকে কয়েকমাস বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিষয়ে এতোদিনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সিন্ডিকেটে এ বিষয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করার সুপারিশ করা হলেও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি না করে, ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এইসব পত্র প্রেরণ করেছে।
শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বলেন, কোনো তদন্ত ছাড়া এবং শিক্ষকদের বক্তব্য না নিয়েই রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত পত্রে সকলের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, ‘এই বিষয়ের সাথে আপনার সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।' তারা বলেন, কোনোপ্রকার তদন্ত ছাড়া সরাসরি এই সিদ্ধান্তে আসা, প্রশাসনের দূরভিসন্ধিরই অংশ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছে। এই যৌন হয়রানির অভিযোগ থেকে মনোযোগ ভিন্নখাতে সরাতে এবং স্মরণকালের সবচেয়ে বড় নিয়োগ (১৫০ পদে) দেয়ার পথকে সুগম করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে