শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে, খুলছে না! বিভ্রান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২০, ২১:২১ আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২০, ২১:২৬
মহামারির আতঙ্কের মধ্যে গেল ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এরপর ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। সরকারের সেই সিদ্ধান্তের পর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকায় গেল ৮ মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আজ অবধি খোলা হয়নি প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
মাঝখানে করোনা মহামারি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক বক্তব্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া নিয়ে আশার আলো দেখেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে দফায় দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোয় এ ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েই যায়।
এর মধ্যে গেল ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকবে। তবে সেপ্টেম্বর মাস শেষে অক্টোবর পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত আসেনি।
সর্বশেষ গেল বুধবার (১১ নভেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এক ভার্চুয়াল সভার পর সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের কথা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও অনলাইনে এ বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। তবে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) নতুন করে সরকারি সিদ্ধান্ত আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে করোনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানানো হয়।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পৃথক পৃথকভাবে খোলার প্রস্তুতি নিতে প্রত্যেক স্কুলে ‘রি ওপেনিং প্ল্যান’ বিষয়ক চিঠি পাঠানো হয়। তাতে ১৪ নভেম্বরের পরে বিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনার ইঙ্গিত ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, ১৫ দিনের জন্য হলেও খুলে যেতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারের পুনঃসিদ্ধান্তে সে প্রস্তুতিও থমকে গেছে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদানের চেষ্টা করছে সরকার। তবে এক্ষেত্রেও নানা বিভ্রান্তি আর সংকট দেখা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই শিক্ষা বিমুখ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দিকেই দৃষ্টি অভিভাবকদের।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রসঙ্গে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেও একটি অসাধু মহল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা পরিবারের সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাচ্ছে। সেই মহলটিই বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তরাই এসব চাপ সৃষ্টি এবং গুজব ছড়াচ্ছে। কিছু অখ্যাত অনলাইন পোর্টাল এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করছেন।
উল্লেখ্য, দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ছয় শর্তে গত ২৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কওমি মাদ্রাসা খোলার অনুমতি দেয়।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেআই