ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের কী হবে?

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ২০:৩৫  
আপডেট :
 ১৩ নভেম্বর ২০২০, ২৩:২০

ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের কী হবে?
ফাইল ছবি

পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যায়নের ব্যবস্থা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও এসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (মাউশি)। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাসের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু লাখ লাখ কারিগরি ও ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কতটা ভাবছে সরকার? এমনটিই প্রশ্ন তুলেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দীর্ঘ ৮ মাসে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়া ও সরকারের কোনো দিক নির্দেশনা না থাকায় দুঃচিন্তায় সময় পার করছেন এসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

দুঃচিন্তায় কারিগরি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী মো. হুমায়ূন কবীর বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘দীর্ঘ আট মাস শিক্ষাকার্যক্রমের বাইরে রয়েছি আমরা। অনেক টেকনোলজির কোনো অনলাইন ক্লাসও হচ্ছেনা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। সরকারের কাছে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হয়েছে। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ার কারণে পাস করতে পারছিনা। এর ফলে চাকরির কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছিনা। পরিবারের বোঝা হয়ে আমার মত অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ায় যেতো।’

তবে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ২,৪,৬,৮ নামে আরো একটি পরীক্ষা রয়েছে। এছাড়াও প্রায় একলাখ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিষয়ে ফেল (রেফার্ড পরীক্ষা) রয়েছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে।

রফিক উল্লাহ নামের এক অভিভাবক বলেন, খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দিচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গ্রামীণফোনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধিতে এগিয়ে এসেছে। তবে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ সুবিধা আমরা দেখছি না। অথচ ডিপ্লোমা বা কারিগরিতে সাধারণত মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। এছাড়াও তেমন কোন অনলাইন ক্লাস নেয়া হচ্ছেনা।

আরেক অভিভাভক তছলিমা বেগম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের একটি মূল্য আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে হয় এটি বুঝতে পারছেনা। সরকার যদি অটোপাস না দিতে পারে তবে কবে ও কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে সে বিষয়টি পরিস্কার করে জানাতে পারে। দ্রুত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।’

পরীক্ষা কবে, কীভাবে

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে অনেক হাতে কলমে বিষয় জড়িত। এ কারণে তাদের অটোপ্রমোটেড করা সম্ভব নয়। ২৯ অক্টোবর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডিপ্লোমা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অটো পাসের দাবিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে অটোপাসের দাবির প্রায় ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড।

কারিগরি বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা জানান, ডিপ্লোমা বলতে শুধুমাত্র সিভিল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং না। আরো ৩৪টা টেকনোলজি রয়েছে। অথচ অধিকাংশ টেকনোলজির ক্লাস হচ্ছেনা। এর ফলে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরীক্ষার আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা কতটুকু প্রস্তুতি নিতে পেরেছে সেটিও দেখার বিষয়।

কারিগরি ও ডিপ্লোমা পরীক্ষা কবে জানতে চাইলে কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্লা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার শিক্ষা সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হবার কথা রয়েছে। আগামী সোম-মঙ্গলবারে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তিনটি রেফার্ড পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি। এ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলে আমরা নিয়মিত রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। তবে সবকিছু নির্ভও করছে করোনা পরিস্থিতির উপর।’

কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারের ভাবনা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিপ্লব। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সাথে একান্ত সঙ্গী হয়ে যাবে প্রযুক্তি। এই চ্যালেঞ্জকে আমরা একটি সম্ভাবনায় পরিণত করতে চাই। এজন্য আমাদেরকে প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর এ লক্ষ্যে ২০৫০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে অনেক সময় নিম্নমানের বলে দেখা হয়। এটি ঠিক নয়। ভোকেশনাল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের কর্মমুখী করা গেলেই সমাজে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও সহজ হবে।

কারিগরি শিক্ষা প্রসারে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। তবে সম্প্রতি মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পাঠকার্যক্রম, পরীক্ষা ও মূল্যায়নে অনেক শিক্ষার্থী বৈষম্য বলে মনে করছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা।

শেখ শাহিন নামের এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সুস্পষ্ট, দ্রুত ও বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানাই।’

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন করতে গিয়ে কারিগরি শিক্ষাকে বেলনের মতো ফুঁ দিয়ে বড় করলেই হবে না। তার জন্য উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত