ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

এনটিআরসিএ করছেটা কী?

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:০৬  
আপডেট :
 ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:১২

এনটিআরসিএ করছেটা কী?
ছবি: নিজস্ব

২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করে এনটিআরসিএ। এ পর্যন্ত মোট ১৫টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চলছে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা।

তবে এর আগে নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএকে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু গত তিন বছরে কারো নিয়োগই হয়নি। প্রশাসনিক কাজে ধীরগতি ও মামলা জটে আটকে আছে এসব নিয়োগ।

সর্বশেষ অজুহাত করোনা ভাইরাস। যে কারণে চাকরিপ্রার্থীরা চিন্তিত, শঙ্কিত। যদিও দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজে ও মাদ্রাসায় ৮০ হাজারের মতো পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক সংকটে শিক্ষার মানও নিচে নেমে যাচ্ছে।

চলছে মৌখিক পরীক্ষা ও করোনায় ধীরগতি

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ১৬তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ভবনে চলছে মৌখিক পরীক্ষা। তবে করোনা পরিস্থিতি ও স্থানের সংকট থাকায় এ কার্যক্রমও চলছে ধীরগতিতে।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব তাহসিনুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আগে দিনে ৬০ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও চলমান পরিস্থিতিতে ৩০-৩২ জনের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে। এ পরীক্ষা আরো তিনমাস চলবে বলেও তিনি জানান।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি আটকে আছে মামলা জটিলতায়

আগামী বছর জানুয়ারিতে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা থাকলেও মামলা জটিলতায় আটকে গেছে গণবিজ্ঞপ্তি। এর ফলে হাজারো শিক্ষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। এনটিআরসিএ'র দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় রায় তাদের পক্ষে গেলে ঐ শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু এনটিআরসিএ নিয়োগ না দিয়ে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে।

এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ'র কর্মকর্তারা বলেন, কোর্টের রায়ে সমন্বিত মেধা তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তাই শুধু ১৩তম ব্যাচের চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গেলে তা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। বিষয়টি নিয়ে রিভিউ আবেদন করেছে এনটিআরসিএ। রিভিউ রায়ের ওপর নির্ভর করছে এনটিআরসিএ কী করবে।

শীতকালীন ছুটিতে বন্ধ হাইকোর্ট

আদালতে মামলার পর শীতকালীন ছুটিতে বন্ধ রয়েছে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম। এর ফলে মামলা সুরাহা হওয়ার সুযোগ দেখছেন না গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশীরা। এর জন্য আদালত খুলতে ও মামলার সময় বিবেচনায় আরো সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এনটিআরসিএ'র এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন চেয়ারম্যানের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

বেসরকারি স্কুল-কলেজে ৮০ হাজার পদ শূন্য

এ পর্যন্ত দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক। এখন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির অপেক্ষায় এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তির জন্য নভেম্বর পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৩৬০টি এবং এখন পর্যন্ত নতুন প্রায় ২২ হাজারসহ প্রায় ৮০ হাজার শূন্য পদের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থীরা অপেক্ষা করছেন।

নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা

প্রতি বছরই সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও গেল তিন বছরে একজন শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারেনি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। নিবন্ধিত প্রার্থীদের ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে নেয়া এনটিআরসিএ'র ১৩তম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ চাকরি প্রার্থীর মধ্যে থেকে শূন্য পদের অনুকূলে ১৭ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীকে পিএসসির আদলে তিন ধাপে পরীক্ষা নিয়ে বাছাই করে এ প্রতিষ্ঠান।

নতুন চেয়ারম্যানে আশার আলো দেখছেন সবাই

এনটিআরসিএ'র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘ নয় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও'র ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে জট খুলতে শুরু করবে।

এদিকে গত ১৭ ডিসেম্বর অবসরে গেছেন এনটিআরসিএ'র সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম হোসেন। এর আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত সচিব মো. আশরাফ উদ্দিনকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ'র) দায়িত্ব দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার এনটিআরসিএ'র কার্যালয়ে এসেছিলেন তিনি। তবে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে যোগদান করতে পারেননি তিনি। তবে নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক ও এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করছেন নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যাবে। এক্ষেত্রে একমাত্র আশার আলো হিসেবে মো. আশরাফ উদ্দিনকেই দেখছেন সবাই।

আরো পড়ুন: মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার

একে/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত