ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাঠদানের প্রধান অন্তরায় বাণিজ্য

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৫২  
আপডেট :
 ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৫৬

পাঠদানের প্রধান অন্তরায় বাণিজ্য
ছবি: নিজস্ব

ঢাকা মহানগরীর আজিমপুর গভ. গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. সোহরাব হুসাইন। যিনি দাখিল, আলীম, বিএড পাস করে ইসলাম ধর্মের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু অনেকদিন হলো ওই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন তিনি।

রাজধানীর একটি প্রসিদ্ধ স্কুলের শিক্ষিকা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমি ব্যবসায় শিক্ষায় নিয়োগ পেয়ে এখন ছেলেদের স্কুলে শারীরিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।

করোনার কারণে দীর্ঘ ১০ মাস বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর স্কুল খুলতে একটি নির্দেশনাও দিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে এভাবে। এমন পরিস্থিতি মহানগরীর প্রধানতম সরকারি স্কুল ও জেলার প্রধান স্কুলেই বেশি। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পদার্থ বিজ্ঞানে যিনি পড়ে এসেছেন তিনি শিক্ষার্থীদের যেভাবে পদার্থ বিজ্ঞান শেখাতে পারবেন তেমনটি গণিতের শিক্ষক শেখাতে পারবেন না। এদিকে আপনি যদি একজন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষককে দিয়ে গণিত পড়ান তবে তিনি নিজেও এ পাঠদান উপভোগ করবেন না।

অপর এক শিক্ষক বলেন, অভিভাবকদের ধারণা এমন হয়েছে যে টাকা দিলেই বা সন্তানকে প্রাইভেট কোচিং পড়ালেই বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। যে কারণে শিক্ষকদের মানসম্মান খর্ব হচ্ছে। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। এছাড়াও অভিভাবকদের সঙ্গেও শিক্ষকদের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।

রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসিন্দা রেবেকা পারভীন তার দুই সন্তানকে শ্রেণি শিক্ষকের কাছে কোচিং করান। বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বলেন, করোনার কারণে কয়েকমাস কোচিং বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকের কাছেই কেন সন্তান পড়ান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না পড়ানো হলে শিক্ষকরা যে শুধু নম্বর কম দেন তাই নয়; অনেক সময় আমার ছেলেকে মানসিকভাবে নির্যাতন বা আড় চোখে দেখেন।

বাংলাদেশ জার্নালের অনুসন্ধানে মেলে এর ব্যাখ্যা। পাঠদানে এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মধ্যে শ্রেণি শিক্ষক হতে প্রধান শিক্ষককে ঘুষ প্রদান ও মাসোহারা দেয়ার ঘটনাও অহরহ আছে। এরফলে বেতনের বাইরেও এসব শিক্ষকদের লাখ লাখ টাকা বাড়তি ইনকাম ও শ্রেণিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে প্রভাব থাকে।

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী এক শিক্ষক বলেন, ১০ বছর চাকরির বয়স না হলেও একজন শিক্ষক কীভাবে ঢাকায় ফ্ল্যাট ও রাজশাহীতে ফ্ল্যাট কিনতে পারেন? এছাড়াও অনেক শিক্ষকের নামে শিক্ষার্থী ভর্তি বাণিজ্য এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলাও রয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ যতীন সরকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এমনিতেই ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় একজন ধর্মের শিক্ষক যদি ইংরেজি শিক্ষা দেন তবে তা শিক্ষাব্যবস্থাকে মেরে ফেলার শামিল। একজন শিক্ষককে পাঠদান করতে উপযুক্ত ট্রেনিং নিতে হয়। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে এমন পরিবেশ তৈরি হলে দেশের টেকসই উন্নয়নে যেমন বাধার সৃষ্টি করছে তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অসহযোগিতা করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অবস্থা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর আছে। এ বিষয়টি দেখা তাদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি।।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রধান শিক্ষকদের অন্যতম দায়িত্ব। এই দায়িত্ব অবহেলা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করায় ২০০৩ সালে তৎকালীন সচিব মোহাম্মদ শহীদুল আলম একটি আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। আদেশে এ বিষয়ে কোন অবহেলা ও শৈথিল্য প্রমাণ পেলে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থার কথাও বলা হয়। অথচ দীর্ঘ ১৭ বছর পার হলেও এ আদেশ এখনো মানছে না অধিকাংশ সরকারি মাধ্যমিক স্কুল।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট আছে। যেকারণে এমন ঘটনা ঘটছে। তবে যদি ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক থাকার পরও সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষককে দিয়ে ইংরেজি পড়ানো হয় তা অন্যায়। এমন কোন অভিযোগ থাকলে এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত