গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি: ঢাবির তিন শিক্ষকের পদাবনমন
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ২১:২৪
গবেষণা চৌর্যবৃত্তি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে পদাবনমন করে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে অবনমন এবং তার ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে।
অপরদিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য জানিয়েছেন।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, “এর আগে তিনজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল সিন্ডিকেট। প্রথম ট্রাইব্যুনালের ভিত্তিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে শাস্তি হিসেবে সহকারী অধ্যাপক থেকে লেকচারার পদে ডিমোশন দেওয়া হয়েছে এবং তার থিসির প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
সামিয়া-মারজানের বিষয়ে তিনি বলেন, “সামিয়া রহমানকে দুই বছরের জন্য সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনমন করা হয়েছে। দুই বছর পর সিন্ডিকেট তার পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করবে। আর যেহেতু মারজান লেকচার এবং বিদেশে অবস্থান করছে, তাই শিক্ষা ছুটি শেষে জয়েন করার পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে। দুই বছর লেকচারার হিসেবে চাকরি করার পর পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারবে।”
তিনি বলেন, “যাদের শাস্তি হয়েছে, তারা এখানে আর আপিলের সুযোগ নাই। তবে তারা চাইলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করতে পারবে।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “গঠিত দুটি ট্রাইব্যুনালের সুপারিশেরর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। পুরো প্রসেডিংস তৈরি হলে বিস্তারিত বলা যাবে।”
পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের এক সভায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুকের ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তখন তাকে কোনো একাডেমিক শাস্তি দেওয়া হয়নি। তার শাস্তি নির্ধারণে গত ২৯ অক্টোবর সিন্ডিকেট সভায় সিন্ডিকেট সদস্য ও আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
অপরদিকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ নামক আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
তবে তা ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-
চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত: সামিয়া-মারজানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল
ঢাবির পাঁচ শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ
বাংলাদেশ জার্নাল/আর
