ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

হল খুলতে আন্দোলন সংক্রমিত হচ্ছে

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:১৪

হল খুলতে আন্দোলন সংক্রমিত হচ্ছে
প্রতীকী ছবি

গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ে গভীর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালায় রূপাতলী স্ট্যান্ডের পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ১১ শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে গভীর রাতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিবাদে হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে।

সর্বশেষ হলের তালা ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা হলেও প্রবেশ করেছে। যা এখন সংক্রমিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খুলতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থী। একই দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। করোনা পরিস্থিতিতে খোলামেলা কথা বলেই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।

হল খোলার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম রাবি শিক্ষার্থীদের: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত না জানালে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্য ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেয় তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘ভ্যাকসিন আনো ভ্যাকসিন দাও, ক্যাম্পাস খুলে দাও’।

শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আবাসিক হল বন্ধ রেখেছে। উপাচার্যকে একাধিকবার হল খোলার বিষয়ে অনুরোধ ও স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চলতি মাসেই হলগুলো খোলার ঘোষণা না দিলে, এই আন্দোলন থেকেই তারা কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।

হল খুলতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ২৩ ফেব্রুয়ারি খুলে দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শনিবার বিকেল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে তাঁরা রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান নেন।

শনিবার রাতে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়। আবাসিক হল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন এলাকার মেসসহ ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া বাইরে ভাড়া থাকতে গিয়ে তাঁরা নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

আবাসিক হল খোলার দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্যের বাসবভনের সামনে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১১টা থেকে তারা সেখানে অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের পক্ষ থেকে হল খোলার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের নজিরবিহীন হামলা চলছে। এমতাবস্থায় আমরা মেসে অনিরাপদ মনে করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ স্বাভাবিক চলছে। শিক্ষক কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ কোয়ার্টারে অবস্থান করছেন তাহলে আমাদের হল কেনো বন্ধ থাকবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খোলার দাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে বেশ কিছু দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়াতে যেসব শিক্ষার্থী এখনও রয়েছেন তাদেরকে পুলিশি হেফাজতে ক্যাম্পাসে আনতে হবে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দিতে হবে। এছাড়া হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানানো হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ জানিয়েছেন।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের যখন বিবাদ হলো এর পর থেকেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল খুলতে আন্দোলন ত্বরান্বিত হচ্ছে। এমন নয় হল খুলতেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা। শিক্ষার্থীরা যদি স্বাস্থবিধি মেনে হলে থাকতে পারে তবে প্রশাসনের তাদের দাবি বিবেচনা করা উচিত।’

শিক্ষাবিদ যতীন সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমি বলবো না শিক্ষার্থীদের দাবিটি অযৌক্তিক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী মেস ভাড়া করে রয়েছে। বিষয়টি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মেনে নেয়া উচিত। আর যারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের ও আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত।’

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত