ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

শিক্ষা অফিসে অসহায় প্রাথমিক শিক্ষকরা

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:১৫  
আপডেট :
 ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:২৮

শিক্ষা অফিসে অসহায় প্রাথমিক শিক্ষকরা
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসে চাকরি স্থায়ীকরণের তালিকায় নাম আছে কি না তা যাচাই করতে এসেছিলেন এক প্রাথমিক শিক্ষক। কিন্তু অফিস সহকারীর কাছে কোন পাত্তাই পাননি তিনি।

বাংলাদেশ জার্নালের কাছে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী বলেন, ‘ফটোকপি করতে দিতে হয় ১০০-২০০ টাকা। আর স্থায়ীকরণের নাম দেখতে ওই সহকারী ১০০০ টাকা চায়। অনেক সময় টাকা দেয়ার পরেও মিলে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে মাগুরা সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেছেন মঈন মোশাররফ (ছদ্মনাম)। সরকার ১৩তম গ্রেড প্রদান করার পর ইএফটিতে ফরম পূরণ করতে তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে ২০০ টাকা।

শুধু তাই নয়, সার্ভিস বুকে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংযুক্ত করতেও প্রত্যেক শিক্ষককে গুণতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার যে তথ্য অধিকার আইন জনগণের জন্য নিশ্চিত করেছে এর কোনো উপকার আমরা পাচ্ছি না। বরং শিক্ষা অফিসে কোন কাজ করতে হলে অফিস সহকারীকে ঘুষ দেয়া লাগে। না হলে শিক্ষা অফিসে খুবই অসহায় শিক্ষকরা।’

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এমন কোন কিছু হচ্ছে বলে আমার জানা নাই। আমি জেনে আপনাকে বিষয়টি জানাবো।’

কবে জানাবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি আপনাকে জানাবো না, কেউ যেনো এমন না করে এজন্য আমি তাদেরকে বলে দিবো।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় সার্ভিস গ্রুপে ডুপ্লিকেট কপি করানোর জন্য প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়া হয়। পরে বিষয়টি অধিদপ্তর জানার পর সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান। এরপর টাকা নেয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মো. মাহবুবর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘ব্যক্তি বিবেচনায় ৫০০ টাকা খুব বেশি নয়। কিন্তু একটি উপজেলায় ২ হাজার শিক্ষক আছেন। এভাবে টাকা নেয়া হলে হিসেবের অঙ্কে দাঁড়ায় ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ কম অর্থ নয়। তবে এ বিষয়ে শিক্ষকরা সোচ্চার না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইএফটিতে অনিয়মের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অঞ্চল ভেদে একজন করে কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকায় শিক্ষকদের অভিযোগ দিতে তাদের মুঠোফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে। এরপরও শিক্ষা অফিসে বন্ধ হচ্ছে না ঘুষ লেনদেন।

এ বিষয়ে এক শিক্ষক বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষকরা গ্রেডেশনে স্থায়ীকরণ জটিলতায় ব্যস্ত আছেন। যা শেষ হওয়ার কথা ছিলো গত বছরের ২৭ নভেম্বর। কিন্তু এখনও স্থায়ীকরণের কাজ অধিকাংশ উপজেলায় সম্পন্ন হয়নি। এ অবস্থায় অফিস সহকারীদের দ্বারস্থ হতে হলেও টাকা ছাড়া সেবা মিলছে না।’

সারাদেশে ৫০০ এর অধিক উপজেলা শিক্ষা অফিস রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে বলেন, ‘সব অফিসেই অনিয়ম হচ্ছে না। কিছু দুষ্টু প্রকৃতির অফিস সহকারী ও কর্তা ব্যক্তি এবং সিস্টেমের কারণে শিক্ষকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং ওসব অফিস থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এছাড়াও লোকবল সংকট একটি বড় কারণ।’

তবে লোকবল সংকটের মধ্যেও অফিসে দুর্নীতি হচ্ছেনা এমন খবরও বাংলাদেশ জার্নালের কাছে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী আছেন মাত্র একজন। ওই অফিসে শিক্ষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজ হাতে টাকা নেন না, অফিস সহকারীদের মাধ্যমে নেন। আবার অফিস সহকারী একা যে এই টাকা খান তা নয়। শিক্ষক সংগঠনের নেতারাও এই অর্থের ভাগ পান।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘এ বিষয়ে শিক্ষকরা কেন অফিস সহকারীর কাছে যাবেন। তারা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গেলেই তো পারেন। তারপরও শিক্ষকরা যদি বিষয়টি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন, জানালে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্ম-সচিব মো. মিজানুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘তদন্তে গেলে অভিযোগকারী কথা ঘুরিয়ে তাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকে না। এ বিষয়ে শিক্ষকদের ভয় না পাওয়ার অনুরোধ করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি চাকরীর তদন্ত বিধি অনুসারেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। যে লেভেলের কর্মকর্তাই হোক প্রমাণ থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত