ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

তিন দিনের নোটিশে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

  মামুন সোহাগ

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২১, ২০:৩৯  
আপডেট :
 ২০ মার্চ ২০২১, ২১:১১

তিন দিনের নোটিশে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
ছবি: নিজস্ব

সেশনজট কমানো ও শিক্ষার মান উন্নয়নের দোহাই দিয়ে অধিভুক্ত করা হয়েছিলো রাজধানীর সাত কলেজকে। এরইমধ্যে কেটে গেছে প্রায় চার বছর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজের একই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হলেও আটকে আছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। নানা সমস্যায় জর্জরিত সাত কলেজ নিয়ে নিয়ে এন্তার অভিযোগ। রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ফল প্রকাশ এখনও হয়নি। তবুও পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তির তাগাদা।

সম্প্রতি স্বল্প সময়ে সেশন ফি, ফরম ফিলাপের নোটিশ ও প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করেই দ্বিতীয় বর্ষের ফরম ফিলাপের নোটিশ যেন শিক্ষার্থীদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা!

তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাইফুর রহমান (১৮-১৯)। অজপাড়াগাঁয়ে বাড়ি, নিতান্তই গরিব ঘরের সন্তান। টিউশনি করে কোন রকমে পড়ালেখার খরচ চালাত সে। করোনার ভয়াল থাবায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ তখন থেকে সে গ্রামে। হঠাৎ কলেজে সেশন ফি আর ফরম ফিলাপের নোটিশে যেনো তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা। কারণ কলেজের নোটিশ অনুযায়ী মার্চের ২১-২৩ তারিখের মধ্যে তাকে গুণতে হবে ফরম ফিলাপের জন্য ৩ হাজার টাকা ও সেশন ফি হিসেবে ৩ হাজার ২৮২ টাকা।

শুধু সাইফুর নয় এমন হতাশায় পড়েছে সাত কলেজে পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাক প্রতিবন্ধী ছাত্রী জানান, করোনার কারণে এমনিতে সবার আর্থিক অবস্থা খারাপ। অল্প সময়ে এত টাকা আমার পক্ষে দেয়া অসম্ভব। আর এজন্য হয়তো পরীক্ষা দেয়া হবে না। পিছিয়ে গেলাম এক বছর।

সাত কলেজের কামরুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ছাত্রাবাসে থাকি। করোনার কারণে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমি গ্রামে অবস্থান করছি। এখন হঠাৎ করে এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে এত টাকা জোগাড় করি! আর ঢাকায় গিয়ে আমি থাকবো কোথায়?

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মালিহা কলি জানান, দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির পর হঠাৎ ফর্ম পূরণের নোটিশ ব্যাপারটা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো। যেখানে ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেখানে এতো আগে ফর্ম পূরণের ব্যাপারটা অযৌক্তিক মনে করি। মূলত ফর্ম পূরণের অল্প দিনের ব্যবধানে পরীক্ষা নেবার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত যেহেতু ঢাবি কর্তৃক নেয়া হয় সেখানে আমাদের মতকে কখনো সেভাবে বিবেচনাধীন রাখা হয় না। তারপর নির্বাচনী পরীক্ষার দু’দিন আগে পরীক্ষার নোটিশ প্রদান করার হয়েছে। পর্যাপ্ত সময় এবং প্রস্তুতির কোন সুযোগ নেই এখানে। তারপরেও দিনশেষে ভালোকিছু কাম্য!

ক্ষোভ প্রকাশ করে ইডেন মহিলা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী নাজমিন ইসলাম জানান, এভাবে পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই ফরম ফিলাপের তারিখ দেয়া ঠিক হয়নি। যারা পরীক্ষার ফল পায়নি তারা দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তিও হতে পারেনি। ফলাফল ছাড়া কে কোন বিষয়ে ইম্প্রুভ দেবে এটাও অজানা। আর ফল ছাড়াই একই মাসে ভর্তি ফরম ফিলাপের ডেট দেয়াটা হাস্যকর। আগে আমাদের ফলাফল দিক আমরা ভর্তি হয়। একই মাসে ভর্তি এবং ফরম ফিলাপ বাবদ ৮ হাজার এর মত টাকা নেয়ার বিষয়টি অমানবিক।

এ বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন বলেন, টাকা প্রদান করার সময় যেন অতিরিক্ত ভিড়-বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আমরা ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছি। তবে ঢাবি যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই সময় পর্যন্ত ফরম পূরণ ও সেশন ফি জমা দিতে পারবে। অর্থাৎ ঢাবির সময় অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত টাকা জমা দিতে পারবে। ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক যে তিনদিন করে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। যার যার সুযোগ মত ৩০ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে।

অতিরিক্ত ফি নিয়ে আর্থিক অসচ্ছলদের বিষয়ে তিনি জানান, এই ফি নির্ধারণে আমাদের কোন হাত নেই তবে একজন অধ্যক্ষ বিশেষ ক্ষমতাবলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিষয়টি আমার বিবেচনায় থাকবে।

১ম বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করেই ২য় বর্ষের পরীক্ষার নোটিশ দেয়ার বিষয়ে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যাদের এখনও ফলাফল প্রকাশ হয়নি তারা ফল পাবার পরেই ফর্ম পূরণ করবে। দ্যাটস অকে! এটা তো কোনো সমস্যা না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাজ করেছে, আমরা আমাদের কাজ করবো। এ বিষয়ে স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গত মাসেও বিক্ষোভ-আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছিলেন। তীব্র আন্দোলনে আজিমপুর, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে গন্তব্যমুখী নগরবাসী। সেসময়, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের চলমান পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত