ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

বেতন-বোনাসেও শিক্ষক অসন্তোষ

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ০২ মে ২০২১, ১৮:৫৮  
আপডেট :
 ০২ মে ২০২১, ১৯:০৯

বেতন-বোনাসেও শিক্ষক অসন্তোষ
ফাইল ছবি

রাজশাহীর একটি সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক তানিয়া সুলতানা। ১০ বছর ধরে রয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। সরকারি চাকরি করায় ১০ রোজায় ঈদুল ফিতরের বোনাস পেয়েছেন। এরপরও তার মন খারাপ। তানিয়া সুলতানা বলছেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার ১৩তম গ্রেড প্রদান করলেও প্রায় দেড় বছরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজও সর্বস্তরে বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, কিছু উপজেলার কিছু শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। অথচ আমরা বেতনও পাচ্ছি ১৫তম গ্রেডে বোনাসও তুলেছি ১৫তম গ্রেডে।

অপরদিকে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার সহকারী শিক্ষক মাহবুবর রহমান জানান, জয়পুরহাট জেলার দুটি উপজেলার শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশন করা হয়েছে। এরফলে শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডেই বেতন পাচ্ছেন। এমনকি এবারের ঈদেও এই উপজেলার শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বোনাস তুলেছেন।

দেশে ৬৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার লাখ শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু কোনো উপজেলায় শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডের বেতন বোনাস পেয়েছেন। আবার কোনো উপজেলায় ১৫ তম গ্রেডের বেতন বোনাসের কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শিক্ষকরা মনে করছেন এটি একটি বৈষম্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র বেতন গ্রেড পার্থক্যের জন্যই প্রাথমিকের শিক্ষকরা ৫২ কোটি টাকার উৎসবভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মূলত শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের সরকারি সফটওয়্যার ‌‘আইবাস প্লাস প্লাস’-এ ফিক্সেশন না হওয়ায় শিক্ষকরা বেতন ও বিভিন্ন ভাতা মিলিয়ে বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কম পাচ্ছেন। আসছে ঈদুল ফিতরে সারাদেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকের প্রত্যেকে এক হাজার ৩০০ টাকা করে উৎসব ভাতা কম পাবেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে শুধু অসন্তোষ নয়, অনেক শিক্ষকের মধ্যে হতাশাও সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৩তম গ্রেড ঘোষণার পরও ৩টি ঈদ ও দুটি বৈশাখী ভাতার অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষকরা। অর্থাৎ এই এক বছরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শিক্ষকদের অন্তত বোনাস-ভাতা বাবদ ৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র বোনাসই নয় প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়ার টাকাও ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে শিক্ষকরা কম অর্থ পাচ্ছেন। যে অর্থ আর কখনো তারা ফেরতও পাবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ উপজেলায় এখনো ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তবে এখনো একাধিক উপজেলায় শিক্ষকদের ঘুষ দিয়ে এ কার্যক্রমে অংশ নিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় জনপ্রতি ৫০০ টাকা ও টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে ৪০০ টাকা ঘুষ দিয়ে গ্রেড ফিক্সেশনের কাজ করতে হচ্ছে। আবার এদিকে নওগা জেলার মান্দা উপজেলার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ১৩তম গ্রেডের কাজ জুনের আগে করবেন না বলে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আগামী ১০ মের মধ্যে আইবাস প্লাস প্লাস-এ বেতন ফিক্সেশনের জন্য মাঠপর্যায়ে কঠোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তবে ১৩তম গ্রেড নিয়ে কোন কর্মকর্তা ও শিক্ষকনেতা ঘুষ গ্রহণের বা অনৈতিক কর্মকান্ড করে থাকলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস একসঙ্গে ছাড় করা হয়েছে। রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকের (সোনালী, রূপালী অগ্রণী ও জনতা) মাধ্যমে ৮টি চেক ছাড় করেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের আগামী ৮ মের মধ্যে বেতন-বোনাসের টাকা তুলতে হবে। আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের ওয়েবসাইট থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের এমপিওর শিট ডাউনলোড করতে বলা হয়েছে।

তবে শিক্ষকদের শতভাগ বোনাসের বিষয়ে একধরণের প্রচারণা তৈরি হলেও এবারও শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ ভাগ অর্থ বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন। আর কর্মচারীরা পাচ্ছেন মূল বেতনের ৫০ ভাগ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম রনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বোনাস বৈষম্য নিরসন করা জরুরি। সংশোধিত নতুন নীতিমালায় বোনাসের প্রসঙ্গটি আনা হলেও শতভাগ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত