ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবি শিক্ষক লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ

  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২১, ১৬:৫৪

ঢাবি শিক্ষক লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী খান) এর বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ এনেছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) এর সাবেক মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস। তবে এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন লীনা তাপসী খান।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ইফফাত আরা নার্গিস। তার অভিযোগ, গবেষণায় এমন চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর তদন্তের আবেদন করলেও, তাতে কোন ফলোদয় হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ নামের গ্রন্থটি সংগ্রহ করি। কিন্তু গ্রন্থটি পাঠ করে আমার এর আগে পাঠ করা ৩/৪ টি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি। তিনি জানান, এবছরের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি লীনা তাপসী খানের পিএইচডি-অভিসন্দর্ভের উপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থ ‘নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ সম্পর্কে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো ফলোদয় হয়নি।

ইফফাত আরা নার্গিস বইয়ের ৩৮ টি জায়গার উল্লেখ করে চোর্যবৃত্তির অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে আছে, গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৪২ লাইন, তৃতীয় অধ্যায়ে ৭ লাইন, চতুর্থ অধ্যায়ে ২৬ লাইন, পঞ্চম অধ্যায়ে ৬ লাইন, ষষ্ঠ অধ্যায়ে এক লাইন, দশম অধ্যায়ে ১২৬ লাইন, একাদশ অধ্যায়ে ১২২ লাইন ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৬৫ লাইন এবং চতুর্দশ অধ্যায়ে ৫৩ লাইন। এসব লাইন রবীন্দ্রনাথের ‘গীতিবিতান’ ও ‘নজরুল-গীতিকা, ইদ্রিস আলীর লেখা ‘নজরুল সঙ্গীতের সুর’, স্বরলিপিকার জগত ঘটক ও কাজী অনিরুদ্ধের ‘নবরাগ’, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘নজরুল সৃষ্ট রাগ ও বন্দিশ’ এবং কাকলী সেনের ‘ফৈয়াজী আলোকে নজরুলগীতি’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে তথ্য নির্দেশ ছাড়া হুবহু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ইফফাত আরা নার্গিস অভিযোগ করেন, ২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের ১৬৯ পৃষ্ঠাই লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে লীনা তাপসী খানের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল, ডিগ্রি প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি, গ্রন্থটি বাতিল এবং গ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত লীনা তাপসী খানের নজরুল পদক প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন লীনা তাপসী খান। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তার যেসব অভিযোগ তা মিথ্যা, ভুল এবং বানোয়াট। আমার বোর্ড আমাকে যেভাবে তত্তাবধান করেছে, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমি সেভাবেই করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সঙ্গীতে প্রায়োগিক বিষয়ে আমার আগে কেউ কাজ(গবেষণা) করেননি। এই ধরনের গবেষণার পদ্ধতি প্রক্রিয়াও অন্য গবেষণার চেয়ে আলাদা। একটি স্বরলিপি যখন ছাপানো হয়, তখন একটি ‘রেফ’ এর কারণে আকাল-পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়। এতে প্রযুক্তিগত নানা ধরনের বিষয় আছে। সেক্ষেত্রে অনেকসময় হুবহু স্ক্যান না করলে কাজ করা যাবে না। এখন কোথায় ফটোকপি করে দেবো, স্ক্যান করে দিবো, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সেভাবেই করেছি।" তিনি বলেন, "তিনি(ইফফাত আরা নার্গিস) আত্মপ্রচারণার জন্য একটা প্রতারণামূলক কাজ করছেন। আমি লিখিতভাবে এটার প্রতিবাদ জানাবো।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে একটু একটু করে জানতে পেরেছি।’

কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু ফরমাল ওয়েতে আমাদের কাছে আসেনি। তাই আমরা প্রথমিকভাবে আগে বিষয়গুলো জেনে নেই, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল-ওআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত