ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চা-সিঙ্গারা নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশে ঢাবির প্রতিবাদ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২১, ২১:৫৪  
আপডেট :
 ১৭ জুন ২০২১, ২২:১৭

চা-সিঙ্গারা নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশে ঢাবির প্রতিবাদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের ব্যঙ্গচিত্রসহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ঢাবির ক্যাফেটারিয়ার স্বল্পমূল্যের খাবার নিয়ে উপাচার্যের মন্তব্য ও কোভিড-১৯ টেস্ট কার্যক্রমে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়েছে, ‘গঠনমূলক সমালোচনা সহ্য করার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধাশীল। তবে কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনার রীতিনীতি ও মূল্যবোধ উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি ঘটায় তাহলে দেশের আইন তার যে প্রতিকার দেয় সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।’

‘বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিশেষ মহল যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে এবং মানহানি না ঘটাতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।’

সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যখন গবেষণা করছে, তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাস্তার ওপর বাঁশ দিয়ে বহিরাগতদের চলাচল সীমিত করতে ব্যস্ত। প্রতিবেদনটিতে ঢাবি উপাচার্যের একটি ব্যঙ্গচিত্রও আঁকা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ঢাবির ডাকসু ক্যাফেটরিয়াতে স্বল্প মূল্যে পাওয়া চা, চপ, সিঙ্গারা নিয়ে ২০১৯ সালে নবীন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপাচার্যের দেয়া বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করা হয়।

এর প্রতিবাদে ঢাবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সেদিন উপাচার্য মূলত নবাগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাস্যরসে ক্যাফেটরিয়ার সাধারণ, স্বল্পমূল্যের খাবার মেন্যু ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার অবারিত সেবা কার্যক্রমের কথা বলেছিলেন। অথচ এক সাংবাদিক উপাচার্যের বক্তব্যের মূল অংশ কাটছাঁট করে ক্যাফেটরিয়ার বিভিন্ন খাবার আইটেমের মূল্যমান-সংক্রান্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে ১৫-২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তৈরি করে। যা ভাইরাল হয়ে যায়। তখন সেটিকে বৃহত্তর সমাজের কিছু মানুষের ভিন্ন রুচি ও ভিন্ন মূল্যবোধ হিসেবে ধরে আমলে নেয়া হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি, কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহলও বিভিন্নভাবে সেসব যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে, যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কিছু অসাধু চক্র কোনো অপতথ্য বার বার ব্যবহার করে সেটিকে তথ্যে পরিণত করতে চায়, যা জনমনে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে।’

ইংরেজি পত্রিকাটির প্রতিবেদনে করোনা মহামারির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সাড়া দেয়নি। এমনকি কোভিড-১৯ টেস্টিং কার্যক্রম শুরু করে অনেক দেরিতে। কিছুদিন পর আবার ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও বেশি আরটি-পিসিআর মেশিন থাকার পরও জাতির এই মহাদুর্যোগে সেবাকার্যক্রম না চালিয়ে বসে আছে।

এমন তথ্যকে বিভ্রান্তিকর দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেরি না করে ১৯ মার্চ ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী, জিন প্রকৌশলী ও প্রাণরসায়নবিদদের নিয়ে প্রথম কোভিড-১৯ রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করে। তিনটি বিভাগের ল্যাবে পঠন-পাঠন ও নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি করে মোট তিনটি আরটি-পিসিআর মেশিন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যগুলো কনভেনশনাল পিসিআর মেশিন, সেগুলো কোভিড টেস্ট করার উপযোগী নয়।

কমিটির মাধ্যমে বিভাগগুলো থেকে তিনটি আরটি পিসিআর মেশিন এনে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে বায়োসেফটি নিশ্চিত করে কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাব তৈরি করা হয় তিন সপ্তাহে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ৫ মে এটির উদ্বোধন করা হয়। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন শিক্ষক দ্বারা এটি পরিচালিত হতে থাকে। কোভিড-১৯ টেস্ট এর জন্য হাসপাতাল বা ডেডিকেটেড ল্যাবের ন্যায় কোনো ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে টেস্টিং কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিল। তবে ল্যাব বন্ধ করে দেয়া হয়নি। প্রায় দশদিন পর যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে, জনবল সংগ্রহ করে আবার টেস্টিং সেবা কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অক্সফোর্ড বা জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে টিকা/ ওষধ আবিষ্কার বা টেস্টিং কিট উদ্ভাবন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারেনি। তবে এর কারণ বোধকরি অনেকেই জানেন। উপাচার্যের সিনেট অভিভাষণে এর প্রতিফলন থাকে। বিভ্রান্তিকর ও খণ্ডিত তথ্য ব্যবহার করে কোনো বিশেষ মহল যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা এবং মানহানি না ঘটাতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত