ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাজধানীতে কোচিং-প্রাইভেট সবই খোলা

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২১, ১৮:৩২  
আপডেট :
 ২২ জুন ২০২১, ১৮:৪৩

রাজধানীতে কোচিং-প্রাইভেট সবই খোলা
ছবি- নিজস্ব

সকাল কী সন্ধা। ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা কোচিং-প্রাইভেটগুলোতে চলছে রমরমা কোচিং ব্যবসা। এসব সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিবাবকদের আনাগোনাও চলছে নিয়মিত। শুধু তাই নয় কোচিং সেন্টারকে কেন্দ্র করে চটপটি-ফুসকার বিকিকিনি নিত্যদিনকার। অথচ করোনা সংক্রমণের উর্দ্ধগতির কারণে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ ঠিক তখনই সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীর বাসাবো, বালুরমাঠ, খিলগাঁও, তিলপাপাড়া, মধুবাগ এলাকায় একাধিক কোচিং সেন্টারে সরেজমিনে এসব চিত্রই দেখা গেছে।

বাসাবো বালুর মাঠ এলাকায় অক্সফোর্ড টিচিং হোম কোচিং সেন্টারে সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত ৪র্থ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। এই কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ এর বেশি। শুধু পাঠ কার্যক্রমই নয় নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার গৌরাঙ্গ দত্ত বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অনলাইনে শিক্ষা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা হলেও এখন অনলাইন ও স্বশরীরেও পাঠদান করানো হচ্ছে। তবে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে কীনা এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকেন তিনি।

সশরীরে শিক্ষার্থী পাঠদানের জন্য অভিভাবকদের থেকে নেয়া হয়েছে লিখিত অনুমতি: অক্সফোর্ড টিচিং হোম কোচিং সেন্টারের পরিচালক গৌরাঙ্গ দত্ত দাবি করে বলেন, অভিভাবকদের লিখিত সম্মতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান করানো হচ্ছে। পরে সকল অভিভাবকদের একটি ফরম্যাটে লিখিত অনুমতির কাগজ দেখান প্রতিবেদককে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, যদি কোন শিশু করোনা আক্রান্ত হয় বা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কোন সমস্যা হলে কোচিং সেন্টারকে যেনো দায়ভার বহন করতে না হয় এ কারণে এ ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। অনুমতি পত্রে দেখা যায়, নির্দিষ্ট আকারের ওই কাগজে লেখা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে যতদ্রুত সম্ভব সরাসরি পাঠদানের জন্য অনুরোধ ও সম্মতি জানাচ্ছি। তবে আবেদন ফর্মে অভিভাবকের স্বাক্ষর নেয়া হলেও কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও তারিখ দেখাতে পারেননি তিনি।

মানুষের চোঁখ এড়াতে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ব্যবহার নিষেধ: মঙ্গলবার দুপুরে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিলেন সবুজবাগ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু সাইদ। বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বলেন, করোনাকালে একদিনের জন্যও প্রাইভেট পড়া বন্ধ করিনি। করোনা মহামারীর প্রথম দিন থেকেই কোচিং ও প্রাইভেট পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমদিকে অদৃশ্য কারণে কিছু কোচিং সেন্টার বন্ধ হলেও শিক্ষকরা পড়ানো বন্ধ করেননি। এক্ষেত্রে নিত্যনতুন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষকরা। মানুষের চোঁখ এড়াতে কাঁধের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করে শপিং ব্যাগে বই নিয়ে পড়তে গিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

শিক্ষকের বাড়ি এখন কোচিং সেন্টার: রাজারবাগ পুলিশ লাইন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, কলেজে ক্লাস করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। একারণে স্যারদের সঙ্গেও যোগাযোগ কম। তবে প্রতিদিনই ১০-১২ জন ব্যাচ আকারে প্রাইভেট পড়ছেন তিনি। সিয়াম বলেন, প্রথমে কোচিং এ পড়লেও শিক্ষকরা কোচিং বাদ দিয়ে নিজের বাসায় ব্যাচ আকারে পড়ানো শুরু করেছেন। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করায় পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত বিষয়ে প্রতিদিন একাধিক শিক্ষকের বাড়িতে আমাদের যেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ মাহমুদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখন যে অবস্থা কোভিডের তা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এখন রাজধানীতে সংক্রমণের হার বেড়ে ২০% আর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ৫০-৬০%। ঢাকাকে করোনামুক্ত রাখতে সরকার এরমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত পাশ্ববর্তী জেলার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। এরমধ্যে যদি কোচিং সেন্টারগুলো চলে এবং সেখানে শিক্ষার্থীরা যায় তা চরম উদ্বেগজনক। দেশে যখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তখন কোচিং সেন্টারগুলো চলবে তা খুবই হতাশাজনক। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে সরকারি বিধি-নিষেধ কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় এবং কোভিড -১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত