ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

পরীক্ষা নাকি পূজা, দোটানায় শিক্ষার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:২৩  
আপডেট :
 ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:২৯

পরীক্ষা নাকি পূজা, দোটানায় শিক্ষার্থীরা
ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্গাপূজার পূর্বনির্ধারিত সময়সূচির ঠিক আগ মূহুর্তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মহামারীতে আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এ নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা যায়, ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে শুরু হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। এদিকে আবার ১২ অক্টোবর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে। ৫ দিনের পুজার বিপরীতে ছুটি মাত্র ২ দিন। পরিসংখ্যান বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে ষষ্ঠী পূজাতেও পরীক্ষার তারিখ পড়েছে।

এছাড়াও ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ১ম সেমিস্টারের ২টি পরীক্ষা পূজার নির্ধারিত ছুটির দিনে দেওয়া হয়েছে। ১২ অক্টোবর ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি অব বাংলাদেশ এবং ১৪ অক্টোবর পপুলেশন জিওগ্রাফি নামক কোর্স দুটির পরীক্ষার কথা রুটিনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্যমতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। করোনার জন্য দীর্ঘ দেড় বছর বিশ্ববিদ্যালয় যদি বন্ধ থাকতে পারে তাহলে পূজা উপলক্ষে ১ সপ্তাহ পরে পরীক্ষা নিতে পারত প্রশাসন। এতে গ্রামে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় বাসস্থান খোঁজার সময় পেত। আর সনাতনী শিক্ষার্থীরা পরিবারের সাথে পূজার আনন্দও ভাগাভাগি করতে পারতো।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবির রায় সানি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, "আমার মতে পরীক্ষার রুটিনগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিৎ। এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত চিন্তার জায়গা। ক্লাস প্রতিনিধিত্ব যারা করে তাদেরকে একবার জিজ্ঞেস করা উচিৎ যে তারা কমফোর্টেবল কিনা ঐ ডেইটে এক্সাম দিতে। যদিও এমনটা করা হয় না। তবে শুধুমাত্র পূজার জন্য না, যেকোন ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাঝখানে এক্সাম ডেইট ফিক্স করা সেই সেই ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সমতুল্য বলে আমি মনে করি। অনতিবিলম্বে যে কোন ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া বন্ধ করার জোর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পিয়াল দাস অনুপ বলেন, "সনাতন ধর্মের প্রধান উৎসব হচ্ছে দূর্গা পূজা। দেবী দূর্গার আগমন বাঙালির হৃদয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের জন্ম দেয়। চারদিকে পূজার আমেজ আর ঢাকের শব্দ মনে এক অদ্ভুত আনন্দ দেয়। কিন্তু এত দিন করোনার কারণে বন্ধ থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক পূজার আগ মূহুর্তে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। যা একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে মেনে নিতে খুব খারাপ লাগে। কারণ একদিকে পরীক্ষার একটা চাপ আর অন্যদিকে পূজার আনন্দ একসাথে সম্ভব নয়। তবে যেহেতু এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো তাই পূজার পরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো হতো। পূজা আর পরীক্ষার সময়সূচি একসাথে পড়ায় একটু বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তা আদৌ কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিয়ে আজো অনেকে দ্বিধান্বিত।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শুভাশীষ মন্ডল শুভ বলেন, গত বছর তো করোনার কারনে বাড়ি গেলাম না আর এবার পরীক্ষার জন্য যাওয়া হবে না। ৭ তারিখ একটা পরীক্ষা মাঝে পূজা তারপর আবার দশমীর পরদিন পরীক্ষা। প্রশাসন চাইলে পরীক্ষাটা একবারে পূজার এক সপ্তাহ পরে শুরু করতে পারতো।

লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, "পূজার মধ্যে পরীক্ষা দিলে হবে না। আমি ডিন, আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয় নাই। রুটিন আমাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে রুটিন দেয় নাই। এজন্য আমি এটা বলতে পারছি না। আমি এটা খোঁজ নিবো। আর পূজার মধ্যে কোনো পরীক্ষার ডেট থাকলে তা সংশোধন করা হবে।"

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোস বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পূজার মধ্যে তো কোনোভাবে পরীক্ষা দেওয়া উচিত না। পূজার কমপক্ষে তিন থেকে চারদিন আগে এবং পূজার তিন থেকে চারদিন পরে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আমার মতে ৮ অক্টোবরের পরে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। আবার ১৮ অক্টোবরের আগেও পরীক্ষা দেওয়া যাবে না।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুন কুমার গোস্বামী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, "পরীক্ষা হবে পূজাও হবে। যে পরীক্ষার্থী, তার মাথায় পরীক্ষা এবং পূজা দুইটাই থাকবে। আর পরীক্ষার ডেটটা পূজার তিনদিন পর হলে পরীক্ষার্থী ধর্মীয় নিয়মনীতি পালন করার সুযোগ পাবে। আর যেহেতু পরীক্ষার্থীর ওলরেডি দেড় বছর সময় নস্ট হয়েছে, এটাও চিন্তা করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমজে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত